গল্প: অবহেলার শেষ শিক্ষা, স্বামী'কে অবহেলার শাস্তি ও শিক্ষা, সেই নারীর

 গল্প: অবহেলার শেষ শিক্ষা

অবহেলার শেষ শিক্ষা

জহির একজন সাধারণ মানুষ। ঢাকা শহরের ব্যস্ত জীবনের ভিড়ে অফিসের হিসাবনিকাশে ডুবে থাকা শান্ত, সোজাসাপটা প্রকৃতির একজন পুরুষ।

তার স্ত্রী লিপি— উচ্চশিক্ষিত, স্টাইলিশ, তবে গর্বিত আর দাম্ভিক স্বভাবের।

জহির ছোট চাকরি করলেও, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সংসারের প্রতিটি চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করে।

বিয়ের প্রথম দুই বছর মন্দ ছিল না।

কিন্তু এরপর লিপির মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

💔 ধীরে ধীরে অবহেলা...

লিপির সবসময় অভিযোগ—

"তুমি চাকরি করো তো করোই, কিন্তু আমাকে একবারও কোনো দামি উপহার দিতে পারো না!"

তার বান্ধবীরা যখন বিদেশে ঘোরে, বড় রেস্টুরেন্টে ডিনার করে, তখন সে ঘরে বসে জহিরকে খোঁটা দেয়—

"তুমি তো আমাকে নিয়ে কিছু করতেই পারো না, আমি কি দাসী নাকি?"

জহির সব শুনেও মুখে কিছু বলত না।

সে ভাবত, “আজ না পারি, কাল তো পারব। সময় লাগবে। কিন্তু সংসারটা টিকুক।”

সে বিশ্বাস করত, ভালোবাসা মানেই ধৈর্য।

কিন্তু ধৈর্য ধরে রেখেও মানুষ কখনো কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

🌫️ লিপির অবহেলা চরমে পৌঁছায়...

জহির অফিস থেকে ফিরলে, লিপি মোবাইল হাতে বসে থাকে।

এক কাপ চা বা একটুখানি হাসিও তাকে দেয় না।

আলাপ শুধু তিরস্কার, ঝাড়ি আর তুলনা।

"রান্না ঘরের গন্ধ তুমি বুঝো না, সংসার বোঝো না, তুমি শুধু টাকা এনে দাও। আমার কোনো অনুভূতি নেই বুঝি?"

একদিন জহির শান্তভাবে বলেছিল,

"তুমি যদি আমাকে বোঝাতে, আমি হয়তো চেষ্টা করতাম। তুমি শুধু ঝাড়ো, ভালোবাসো না।"

লিপি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেছিল,

"ভালোবাসা না থাকলে আমি থাকতাম? তুমি কি ভাবো তুমি ছাড়া আমি কিছুই না?"

💫 পর্দায় এল এক নতুন চরিত্র…

মাহিনূর— জহিরের অফিসের নতুন হিসাবরক্ষক।

বয়সে ছোট, কথায় ভদ্র, আচরণে নম্র।

প্রথম দিকে অফিসিয়াল কথাবার্তা হলেও, ধীরে ধীরে সে বুঝে ফেলল জহির সবসময় চুপচাপ, কিন্তু মন ভারী।

একদিন মাহিনূর সরাসরি বলেই ফেলল,

"আপনার চোখে একরকম কষ্ট আছে। কেউ বুঝে না হয়তো?"

জহির একটু হাসল।

"মানুষ বুঝে, শুধু যাদের বোঝার দরকার, তারাই বোঝে না।"

মাহিনূরের কাছ থেকে প্রথমবার জহির শ্রদ্ধা, সহানুভূতি আর সম্মান পেল।

সে তাকে সময় দিতে শুরু করলো। নিয়মিত কথা, হাসি, গল্প…

জহিরের সেই বিবর্ণ জীবন যেন একটু রঙ ফিরে পেল।

🔥 পরিণতির শুরু…

লিপি মাহিনূরের কথা জানতে পারল একদিন।

চিৎকার, ঝগড়া, অপমান— কিছুই বাদ দিল না।

জহির শুধু বলেছিল,

"আমি শুধু এমন একজনের পাশে থাকতে চেয়েছি, যে আমাকে মানুষ ভাবে। তুমি সেটা অনেক আগে ভুলে গেছো।"

লিপি রেগে বলে,

"তুমি কি ওই মেয়েকে বিয়ে করবে?"

জহির নিশ্চুপ থেকে বলেছিল,

"হ্যাঁ। আমি এবার নিজেকে ভালোবাসতে চাই। তোমার অবহেলায় আর না।"

💍 নতুন জীবন, নতুন সুখ…

জহির মাহিনূরকে বিয়ে করে।

এই বিয়েতে প্রেম, শ্রদ্ধা আর বোঝাপড়া ছিল।

মাহিনূর জহিরের একেকটা ছোট প্রয়াসে হাসি দিত।

রাতে চা বানিয়ে নিয়ে আসত, অফিসে খোঁজ নিত, মাঝে মাঝে বলে—

"তুমি যদি না থাকতে, আমি এতটা ভালোবাসা চিনতেই পারতাম না!"

জহির প্রথমবার অনুভব করলো,

"এটাই সংসার। যেখানে কেউ তোর পাশে না থেকেও পাশে থাকে, শ্রদ্ধা করে, আর তোর অস্তিত্বের দাম দেয়।"

🌪️ আর তখনই…

লিপির জীবন এলোমেলো হয়ে গেল।

নিজের আত্মীয়-স্বজন মুখ ফিরিয়ে নিল।

বান্ধবীরা দূরে সরে গেল— "তুমি তো স্বামীকেই রাখতে পারো না!"

লিপির কাছে টাকাপয়সা ছিল, কিন্তু কেউ ছিল না।

সে রাতে বিছানায় শুয়ে কাঁদে, স্মৃতির পর স্মৃতি মনে পড়ে—

কিভাবে জহির প্রতিদিন হাসিমুখে ফিরতো, ছোট উপহার আনতো, কষ্ট হলেও ‘না’ বলতো না।

একদিন সে নিজেই বলেছিল,

"তুমি যে আমার জন্য এত করো, আমি কি তার যোগ্য?"

সে কথা মনে পড়ে।

আর তখন সে ফুঁপিয়ে কাঁদে—

"জহির আমার ছিল, আমি সেটা কখনো বুঝিনি। আমার অহংকারই আজ আমাকে একা করে দিয়েছে।"

🔚 স্ত্রীর শিক্ষা...

"ভালোবাসা মানুষকে শুধু বাঁচায় না, বদলে দেয়।

কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে অবহেলা করলে, একদিন সে চলে যায়—

সেই জায়গায়, যেখানে সে হাসতে পারে।"

লিপি আজো বেঁচে আছে,

কিন্তু প্রতিদিন একটা মানুষ হারানোর কষ্টে,

একটা শিক্ষা নিয়ে—

👉 "ঘরে সতীন না থাকলেই, স্বামীকে নিজের ভাবা ভুল— কারণ অবহেলা যত বাড়ে, তত সে দূরে সরে যায়।"