একজন পুরুষের নিঃশব্দ ধ্বংস
রফিক ছিল একেবারেই সাধারণ মানুষ। উচ্চাভিলাষী না হলেও স্বপ্ন ছিল ছোট্ট একটা সুখী পরিবার গড়ে তোলা। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের খরচ চালাতো, আর রাতে ঘরে ফেরার পর আশা করতো শান্তির একটু আশ্রয়। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা হলো—একজন বদমেজাজি, রাগী স্ত্রীকে বিয়ে করা।
শুরুর দিকে রফিক ভেবেছিল, হয়তো সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো সংসারের টানাপোড়েন, নতুন জীবনের চাপ থেকেই স্ত্রীর মধ্যে এই অস্থিরতা। কিন্তু বছর ঘুরতেই রফিক বুঝলো—এটা কেবল সাময়িক মেজাজ নয়, বরং তার স্ত্রীর আসল চরিত্র।
প্রতিদিনের নীরব যুদ্ধ
রফিক ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই অফিসের জন্য বেরিয়ে যেত। সারাদিন ঘাম ঝরিয়ে সামান্য বেতনের টাকা রোজগার করতো। অথচ ঘরে ফিরে তার জন্য অপেক্ষা করতো না ভালোবাসা, না শান্তি।
তার পরিবর্তে থাকতো—
অবিরাম অভিযোগ,
ছোট ছোট বিষয়ে তর্ক,
প্রতিবেশীর সামনে অপমান,
আর নিরন্তর সন্দেহ।
রফিক চুপ করে সব সহ্য করতো। কারণ সে জানতো, প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
বন্ধু ও আত্মীয় হারানো
স্ত্রীর খিটখিটে স্বভাবের কারণে রফিক ধীরে ধীরে সব আত্মীয়-বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। কেউ বাসায় আসতে চাইতো না। কারণ এক কাপ চা দেওয়ার আগেই তার স্ত্রী এমনভাবে রাগ ঝাড়তো যে, অতিথিরা আর আসার নামই নিত না।
ধীরে ধীরে রফিকের চারপাশের জগতটা ফাঁকা হয়ে গেল।
মনোবল ভেঙে পড়া
একদিন অফিস থেকে ফিরেই রফিক নিজের ঘরে চুপচাপ বসে ছিল। স্ত্রী আবারও নানা অভিযোগ করে যাচ্ছিল। সে আর কিছু শুনছিল না, শুধু ভাবছিল—
“আমি আসলে কী ভুল করেছি? সংসারের সব দায়িত্ব পালন করি, কোনো খারাপ পথে যাই না, তবুও কেন আমি শান্তি পাই না?”
তার মনে হতে লাগলো, সে যেন একজন বন্দি। যাকে প্রতিদিন ধীরে ধীরে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হচ্ছে।
পুরুষের ভেতরের মৃত্যু
রফিক বাইরের মানুষদের চোখে হয়তো এখনও “ভালো স্বামী”, “ভালো বাবা”। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে মরে গিয়েছে বহু আগেই। তার স্বপ্ন, তার আশা, তার হাসি—সবকিছু স্ত্রীর রাগ আর বদমেজাজের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
শেষমেষ একদিন রফিক বুঝলো—
একজন পুরুষকে ধ্বংস করতে বাহিরের দুনিয়ার দরকার হয় না, কোনো শত্রু বা দারিদ্র্যেরও দরকার হয় না।
শুধুমাত্র একটা বদমেজাজি, রাগী স্ত্রীই যথেষ্ট, যিনি ধীরে ধীরে তার জীবন থেকে শান্তি, সম্মান, ভালোবাসা—সব কিছু কেড়ে নিয়ে তাকে এক জীবন্ত লাশে পরিণত করে দিতে পারে।