পৃথিবীতে মায়ের মতো আপন কেউ হবে না!

মায়ের মতো আপন পৃথিবীতে আর কেউ নেই — এটা শুধু প্রবাদ নয়, মানব জীবনের এক অমোঘ সত্য। মা জন্মের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের জন্য নিজের অস্তিত্বকে বিলিয়ে দেন। তাঁর শ্বাসের প্রতিটি তালে থাকে সন্তানের চিন্তা, সন্তানের হাসিই তাঁর আনন্দ, সন্তানের ব্যথাই তাঁর ব্যথা।

মানুষ যত বড়ই হোক, যত দূরেই যাক, জীবনের প্রথম আশ্রয় সেই মায়ের বুক। ক্ষুধার্ত শিশুর প্রথম আহার থেকে শুরু করে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মা এমন এক ছায়া, যা নিঃশর্তে সান্ত্বনা দেয়। পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে, তার অধিকাংশই শর্তসাপেক্ষ—কেউ ভালো থাকলে কাছে আসে, বিপদে দূরে সরে যায়; কিন্তু মা এমন একজন, যিনি সন্তানের ভুলত্রুটি সত্ত্বেও তাকে বুকে জড়িয়ে রাখেন।

মা হারানোর বেদনা এক অদৃশ্য শূন্যতা, যা কোনো কিছু দিয়ে পূর্ণ করা যায় না। যেদিন মা থাকেন না, সেদিন বুঝতে পারি, বাড়ির প্রতিটি কোণে তাঁর স্পর্শ ছিল, প্রতিটি পরামর্শে জীবনের নিরাপত্তা ছিল। তাঁর না-থাকার মানেই জীবনের অর্ধেক আলো নিভে যাওয়া। মা চলে গেলে পৃথিবী যেন হঠাৎ করেই নির্জন হয়ে যায়—যেখানে ভালোবাসার সহজ ভাষা আর কেউ বলতে পারে না।

মায়ের ভালোবাসা কখনো অলংকারের মোড়কে বাঁধা নয়; তা নিঃশব্দে প্রতিদিনের খাবারে, অসুখে রাত জেগে থাকা চোখে, সন্তান ফিরে আসা পর্যন্ত দরজায় অপেক্ষা করা ছায়ায় লুকিয়ে থাকে। মায়ের জন্য কোনো স্বার্থ নেই, নেই কোনো বিনিময়ের হিসাব। তিনি শুধু দিতে জানেন, দিতে দিতে শেষ হয়ে যেতে জানেন, অথচ অভিযোগের ভাষা তাঁর ঠোঁটে আসে না।

মা হারানোর পরে মানুষ বোঝে—এই পৃথিবীতে যত বন্ধু, আত্মীয়, প্রিয়জনই থাকুক না কেন, মায়ের স্নেহের বিকল্প নেই। মা চলে গেলে প্রতিটি বিজয়ের মুহূর্তও যেন অসম্পূর্ণ লাগে, কারণ যিনি প্রথম হাসিমুখে বলতে পারতেন “আমার সন্তান পেরেছে”, সেই কণ্ঠ আর শোনা যায় না।

তাই জীবিত অবস্থায় মায়ের প্রতি যত্ন নেওয়া, সময় দেওয়া, তাঁর সাথে হাসি-আড্ডা ভাগ করে নেওয়াই সন্তানের সত্যিকার কর্তব্য। কারণ, মায়ের ছায়া একবার চলে গেলে, যত আক্ষেপই করি, আর ফিরে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর সব সাফল্য, ধনসম্পদ, প্রাপ্তি—কোনোটাই মায়ের অশ্রুর বিনিময়ে কেনা যায় না, আর তাঁর অনুপস্থিতি কোনো অর্জন দিয়ে পূরণ হয় না।

মা যে কি—এটা শব্দে শেষ করা যায় না। তিনি নিঃশব্দে পাহাড়সম ত্যাগ, সাগরসম স্নেহ, আর আকাশসম উদারতা। মা ছাড়া পৃথিবী থাকে, কিন্তু পৃথিবীর রঙ ফিকে হয়ে যায়। মায়ের জন্য প্রতিটি দিনই হওয়া উচিত ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধার দিন।