আজকে বলতেই হবে, বন্ধুদের ঠেলাঠেলি করে দেওয়া

স্কুলের করিডরের গল্প

স্কুলের করিডরের গল্প

রোদ্দুর ভরা এক দুপুর। ক্লাসের ঘণ্টা appena বেজে উঠেছে। সবাই ব্যাগ গুছিয়ে বের হচ্ছে। স্কুলের করিডরে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ—চুপচাপ, লাজুক স্বভাবের এক ছাত্র। তার হাতে বই, চোখ নামানো। আরেক পাশে হাঁটছে অনামিকা, সেই ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী মেয়ে। হাতে বই নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, যেন পুরো পৃথিবীটাই তার বইয়ের ভেতর বন্দী।

মেঘের বুকের ভেতরে অনেকদিন ধরেই একটা ছোট্ট ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনামিকাকে বলবে,

“তুই জানিস না হয়তো, কিন্তু তোকে খুব পছন্দ করি।”

কিন্তু মুখ খোলার সাহস তার হয় না। সে শুধু দূর থেকে দেখে, বুকের ভেতরের কথাগুলো গিলে ফেলে।

বন্ধুরা বিষয়টা অনেক আগেই ধরে ফেলেছে। তারা জানে মেঘের চোখ সবসময় অনামিকার দিকে খুঁজে বেড়ায়। তাই আজ তারা ঠিক করল—মেঘকে ঠেলে না দিলে সে কখনোই সাহস করবে না।

করিডরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে দু’জন বন্ধু হেসে হেসে ওকে ধাক্কা দিল। মেঘ একেবারে হোঁচট খেয়ে সামনে এগিয়ে গেল, আর অনামিকার একেবারে পাশেই গিয়ে দাঁড়াল।

অনামিকা হকচকিয়ে তাকাল,

— “এই! তুমি হঠাৎ সামনে এলে কেন?”

মেঘ তোতলাতে তোতলাতে বলল,

— “না মানে… আসলে… বইটা পড়ে ভালো লাগছে?”

বন্ধুরা পেছনে হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মেঘের মুখ লাল হয়ে গেছে। অথচ তার বুকের ভেতরে অদ্ভুত সাহস জেগে উঠল। হয়তো এটাই সুযোগ।

সে ধীরে বলল,

— “তুই সবসময় পড়াশোনায় মন দিস… ভালো লাগে তোকে দেখে। আমি… আমি অনেকদিন ধরে বলতে চাইছিলাম…”

অনামিকা চুপ করে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর হালকা হেসে বলল,

— “কথাটা শেষ করো না কেন?”

মেঘের বুকের ভেতর ধুকপুকানি চলতে লাগল। বন্ধুরা পেছন থেকে “বলো! বলো!” করে উৎসাহ দিচ্ছে।

ঠিক তখনই ঘণ্টা আবার বেজে উঠল। অনামিকা বই গুটিয়ে হেসে চলে গেল ক্লাসে। মেঘ দাঁড়িয়ে রইল মাঝপথে।

বন্ধুরা দৌড়ে এসে কাঁধে চাপড় দিল—

— “আজ না পারলি, কাল পারবি। অন্তত শুরু তো হল!”

সেদিন মেঘ বুঝল—বন্ধুত্ব শুধু হাসাহাসি নয়, কখনো কখনো ঠেলে সামনে এগিয়ে দেওয়ার নামই আসল বন্ধুত্ব। আর ভালোবাসা? সেটা সময় মতো বলাই যায়, যদি সাহসটা জাগিয়ে তোলা যায়।