ভালোবাসার মুখোশ
তামিম আর জিসান—দুজনের বন্ধুত্ব প্রায় ৮ বছরের। কলেজ থেকে শুরু, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত একসাথে কেটেছে। চারপাশে সবাই বলত, “এদের বন্ধুত্বটা ঈর্ষণীয়!” তামিম সবসময় জিসানকে ভাইয়ের মতো দেখেছে। যে কাজেই হাত দিয়েছে, সেখানে জিসানকেও নিয়েছে। এমনকি নিজের প্রেমিকা মীমের সাথেও জিসানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল—“এই আমার ছোট ভাই” বলে।
জিসানও সবসময় হেসে, খুশি মনে ছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে চলছিল অন্য খেলা।
মীম আর তামিমের সম্পর্কটা দিন দিন গভীর হচ্ছিল। হঠাৎ একদিন মীমের ব্যবহার একটু বদলে গেল। হঠাৎ করেই সে তামিমের মেসেজের উত্তর দিতে দেরি করত, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে রাগ করত। তামিম ভাবত, হয়তো মীম ব্যস্ত বা রাগ করেছে। কিন্তু কিছু একটা যেন ঠিক ছিল না।
একদিন হঠাৎ করে তামিম তার পুরনো একটা ফোনে WhatsApp লগ-ইন করল। ওখানে সে দেখতে পেল জিসান আর মীমের ব্যক্তিগত চ্যাট—যেখানে মীম জিসানের সঙ্গে মাঝরাতে দেখা করছে, আর জিসান মজা করে লিখছে, “ও বুঝতেই পারছে না কিছু… ভাই-ভাই বলে এখনো বোকা বানাচ্ছে।”
তামিম স্তব্ধ।
সেই রাতে সে কিছু বলেনি। কেবল চুপচাপ বসে থেকেছে। পরদিন, সে মীমকে এক কাপ চা খেতে ডাকে, আর পাশে জিসানও ছিল। তামিম খুব শান্তভাবে বলল, “বন্ধুত্ব আর প্রেম, দুটোকেই বিশ্বাস করেছিলাম। তোমাদের জন্য নয়, নিজের জন্য আফসোস হয়—এমন অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছিলাম!”
মীম কিছু বলার আগেই চলে গেল তামিম। আর জিসান? শুধু চুপচাপ বসে ছিল, কারণ সে জানত—ভালোবাসার মুখোশ খুলে গেছে।
তারপর তামিম একাই নতুন জীবন শুরু করল। একাকীত্বকে শক্তিতে রূপান্তর করল। নতুন করে ক্যারিয়ারে মন দিল, নিজের প্রতি ফোকাস করল। কয়েক বছর পর, জিসান আর মীম—দুজনেই হারিয়ে গেল তামিমের জীবনের পেছনের পাতায়। আর তামিম দাঁড়িয়ে গেল এক শক্ত ভিতের ওপর।
তামিম আজও বলে,
“সবাই বন্ধু হতে পারে না, কিছু মানুষ কেবল কাছাকাছি এসে বিশ্বাস ভাঙার সুযোগ খোঁজে।”