টাকা দিয়ে হয়তো বিছানা কেনা যায়, কিন্তু শান্তির ঘুম কেনা যায় না।

 গল্প

(বাস্তব জীবনের ছায়া থেকে গড়ে ওঠা এক করুণ ও গভীর উপলব্ধির গল্প)

না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প

---

রাত্রি তখন আকাশে নীরবতার কালি মেখে দাঁড়িয়ে। চাঁদের আলো নেই, শহরের জানালা ভেদ করে বাতাস আসছে ধীরে ধীরে। সে সময় লাবণ্যের হাতের মোবাইল স্ক্রিনে একটা পুরনো মেসেজ ভেসে উঠল—"তুই রাজি না হলে আমি বাঁচবো না।"

লাবণ্য চুপ করে বসে থাকে। সেদিনের সেই রাতটা আজও ভুলতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় রাজীব ছিল তার ছায়ার মতো। অভাব ছিল, তবু সে ছিল আশার মতো। লাবণ্যর চোখে রাজীব ছিল নিরাপদ এক পৃথিবীর নাম।

কিন্তু সেই পৃথিবী তৈরি হওয়ার আগেই বাবা-মা এসে দাঁড়ায় ভবিষ্যতের হিসেব নিয়ে।

“ছেলেটা ভালো না। ভবিষ্যত অন্ধকার।”

“আর যে পাত্র এসেছে, দেখ, আমেরিকা ফেরত, ব্যাংকে চাকরি করে, মা-বাবা নেই—বুঝলি, আপন ঘর পাবি।”

লাবণ্য অনেক বলেছিল। কান্না করেছিল। কিন্তু সমাজ আর অভিভাবকদের চোখে "প্রেম" তখনো এক ধরণের অপরাধ। অবশেষে পরাজিত হয় ভালোবাসা, জিতে যায় নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের ফাঁকি।

---

বিয়ের পরে শুরু হলো ‘আধুনিক পিঞ্জর’

বরের নাম ছিল আদিত্য। আদিত্য সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। দামি গাড়ি, বড় ফ্ল্যাট, সপ্তাহে দুইবার রেস্টুরেন্ট, বছরে একবার বিদেশ ভ্রমণ।

কিন্তু সে হাসত না, গল্প করত না, চোখে চোখ রাখত না।

প্রতিদিন লাবণ্য আয়নায় নিজের মুখ দেখে মনে মনে জিজ্ঞেস করত, “আমি কি সত্যিই সুখী?”

বন্ধুরা বলত, “তোর লাইফটা তো সেট। আদিত্য কতো কিছু দেয়!”

সে চুপ করে থাকত, কারণ কেউ বোঝে না—মন না থাকলে গয়নাও বালি মনে হয়।

---

চতুর্থ বছরের এক সন্ধ্যা

একদিন রাতে আদিত্য কাজে ব্যস্ত ছিল। লাবণ্য ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে ঢুকল। এক পুরনো বন্ধুর প্রোফাইলে রাজীবের ছবি—সাদা শার্টে হাসছে সে, হাতে একটি ছোট্ট মেয়ের হাত। ক্যাপশনে লেখা—“যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে নিয়েই ঘর বাঁধা যায়, তবেই জীবনটা পূর্ণ হয়।”

লাবণ্যের চোখ ভিজে গেল। গলার কাছে কী যেন দলা পাকিয়ে উঠল।

তাকে রাজীব একদিন বলেছিল, “ভালোবাসা মানে দায়িত্ব, শুধু টাকার যোগফল না।”

সে কথা ভুলে গিয়ে সে নিরাপত্তা খুঁজেছিল, কিন্তু শান্তি হারিয়েছিল।

---

পাঁচ বছর পরে

লাবণ্যের ঘরে এখন টিভি, এসি, সোফা—সবই আছে। নেই কেবল ভালোবাসার শব্দ, আন্তরিকতার ছোঁয়া। আদিত্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত, সে এক নিঃসঙ্গ জীবন কাটায় ছাদের নিচে।

বাবা-মা বলেন, “সবই তো আছে তোর, কিসের অভাব?”

সে বলে না, “মনটা যে খালি…”

---

এই গল্পটা শুধু লাবণ্যের না—অনেক নারীর গল্প। যারা "ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা"র নামে ভালোবাসাকে কোরবানি দেয়। কিন্তু কেউ বলে না,

"ভালোবাসা ছাড়া নিরাপত্তা একটা বদ্ধ খাঁচা, যেখানে বাইরে ঝলক থাকলেও ভেতরে নিঃস্বতা থাকে।"

অনিচ্ছায় গড়ে ওঠা সংসার টিকে যেতে পারে দায়িত্বে, কিন্তু সুখ আসে না।

টাকা দিয়ে হয়তো বিছানা কেনা যায়, কিন্তু শান্তির ঘুম কেনা যায় না।

ধন-সম্পদ কেবল তখনই মূল্যবান, যখন তার পাশে একটা হাসিমাখা মন থাকে।

Disclaimer / Story Policy

This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.

We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.

If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.

"এই গল্পটি ‘গল্পের রাজ্য.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com

এমন মন ছুয়ে যাওয়া গল্প পরতে ভিজিট করুন ক্লিক