পুরুষ টাকার মেশিন
আবুল কুয়েত থাকে। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে মোবাইলে দেশে পাঠানোর টাকার হিসাব দিয়ে। বাচ্চার স্কুল ফি, স্ত্রীর পার্লারের বিল, মায়ের ওষুধ, বাবার জমির মামলা—সব কিছুই টাকা। আবুল নিজের নাম ভুলে গেছে, এখন তার নাম সবার ফোনে “টাকা পাঠাও”।
---
টাকার মেশিন অচল
ইমরান কাতারে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ পায়ে আঘাত পায়। ডাক্তার বলে ৬ মাস বিশ্রাম। দেশে ফোন দিয়ে খবর দেয়। স্ত্রীর কণ্ঠে বিরক্তি—“তাহলে এবার আমি কীভাবে চলবো?” ইমরান জানে, এখন সে অচল টাকার মেশিন। ভালোবাসা শর্তে বাঁধা ছিল।
---
একটা টাকার মেশিন
জামাল ভাই প্রতিদিন রাতে কারখানা থেকে ফিরেন ক্লান্ত শরীরে। নিজের জন্য রান্নাও করেন না। দেশে টাকা পাঠিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। তার ছেলেটা ফোনে বলে, “বাবা, তুমি তো সব সময় টাকা পাঠাও, কখন আসবা আমার স্কুলের অনুষ্ঠানে?” জামাল ফোনটা কাঁপা হাতে রেখে দেয়—সে তো শুধু একটা টাকার মেশিন।
---
প্রবাসী টাকার মেশিন
মনির সৌদি থাকে ১২ বছর। দেশের সব ভাইয়ের ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এবার নিজে দেশে ফিরতে চায়। ভাইয়েরা বলে, “তুই কি পাগল? তোর থাকার জায়গা নাই এখানে। আবার যাবি।” মনির আয়নায় নিজের চোখে তাকায়—প্রবাসী টাকার মেশিনদের দেশে জায়গা থাকে না।
---
আমি এক টাকার মেশিন
ফয়সাল মালয়েশিয়া গিয়ে প্রথম বছরেই গাড়ি কিনে দিয়েছিল ভাইকে। বোনের বিয়ের খরচ, বাড়ির ছাদ ঢালাই সব করেছে সে। একদিন হঠাৎ ফোন করে মা বলে, “তুই তো নিজের বিয়েই করলি না।” ফয়সাল চুপ করে। সে জানে, সে এক টাকার মেশিন। আবেগ তার বিলাসিতা।
---
একটা টাকার মেশিন প্যাকেট হয়েছে সাদা কাপড়ে
রবিউল প্রবাসে থাকাকালীন অতিরিক্ত ওভারটাইম করতে গিয়ে একদিন হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। বন্ধুরা মিলে লাশ দেশে পাঠায়। বিমানবন্দরে পরিবার শুধু কফিন দেখে। কেউ তার কষ্টের গল্প শোনে না। সবাই বলে—“ওর কপাল ভালো, মরেও দেশে ফিরছে।” এক টাকার মেশিন সাদা কাপড়ে প্যাকেট হয়ে গেছে।
---
একটা টাকার মেশিন পেকেট হইছে
বদরুল, কুয়েত প্রবাসী। নিজের চিকিৎসার জন্য টাকা জমাতে পারেনি। একদিন হঠাৎ স্ট্রোক হয়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যায়। কোম্পানি জানিয়ে দেয়—"লাশ প্যাকেট হইছে, পাঠাই দিব।” পরিবার শুধু চুপ করে থাকে, কারণ বদরুলের মতো হাজারো মেশিন প্যাকেট হয়ে ফিরে আসে।
---
টাকার মেশিন প্রবাসী জীবন
নাহিদ সকালে উঠে কাজ, দুপুরে কাজ, রাতে কাজ। নিজের জীবনের হিসাব নেই, শুধু দেশে পাঠানো হিসাব। ছুটিতে দেশে গেলে আত্মীয়রা বলে, “কী মালটা! এখনো বিটিএস ফোন ব্যবহার করো?” নাহিদ হাসে, কিন্তু ভেতরে চুপচাপ কান্না করে। টাকার মেশিনের জীবনটা জ্বলন্ত কিন্তু নীরব।
---
টাকার মেশিনের শেষ হিসাব
আলাউদ্দিন ১৫ বছর ধরে দুবাই। একদিন দেশে ফিরে স্থায়ী হতে চায়। সবাই বলে—"তোর টাকা পাঠানো বন্ধ কেন?” সে বুঝে যায়, তার অস্তিত্ব শুধু পাঠানো টাকাতেই ছিল। সে আজকাল হিসাব রাখে না—কত টাকা পাঠালো না, কতটা মন ভাঙলো।
---
টাকার মেশিনের থেমে যাওয়া
সাইফুল একা থাকে রুমে, তিনজনের কাজ একা করে। দেশে বাবা-মার সাথেও নিয়মিত কথা হয় না। একদিন রাতে ঘুমাতে গিয়ে চোখে পানি চলে আসে। সে ফিসফিস করে, “তোর কাজ শেষ, সাইফুল। মেশিন থেমে যাচ্ছে।” সকালে অফিসে কেউ এক কাপ চা দিতেও এগিয়ে আসে না।