বউকে যত্ন করা অপরাধ নয়। বরং সেটাই একজন স্বামীর আসল দায়িত্ব।

বউ-পাগলা রহিম

বউ-পাগলা রহিম

রহিম ছিল গ্রামের এক শান্ত ছেলে। ছোট থেকে পরিশ্রমী, সবার উপকারে আসে। সবাই বলে—

“রহিমটা ভালো ছেলে। একদিন ভালো পরিবারে বিয়ে করলে বউয়ের কপাল খুলে যাবে।”

সত্যিই তাই হলো। রহিমের বিয়ে হলো সেলিনা নামের এক মেয়ের সাথে।

বিয়ের প্রথম দিন থেকেই রহিম সিদ্ধান্ত নিলো—

“যত কষ্টই হোক, আমার স্ত্রীকে কখনো কষ্ট পেতে দেব না। ও-ই আমার সংসারের প্রাণ।”

রহিমের যত্ন শুরু

সেলিনা যদি রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রান্না করে, রহিম গিয়ে পানি এনে দেয়।

বাজারে গেলে হাতে ব্যাগ দেয় না, নিজে সব বহন করে।

মসজিদে নামাজ শেষে বন্ধুরা আড্ডা দেয়, রহিম তাড়াহুড়া করে বাড়ি ফেরে—সেলিনা একা বসে আছে বলে।

ঈদ এলে আগে বউয়ের জন্য জামা কেনে, তারপর নিজের কথা ভাবে।

সমাজের চোখ

এমন দৃশ্য গ্রামে নতুন ছিল না, তবে এতটা “বউ-যত্ন” কেউ দেখেনি।

তখন শুরু হলো ফিসফাস—

“দেখেছ? রহিম বউয়ের দাস হয়ে গেছে।”

“বউ ছাড়া ওর চলেই না।”

“পুরুষ মানুষ হয়ে এভাবে বউকে মাথায় তুলে রাখে?”

কেউ আবার মজা করে বলে—

“ওকে আর ডাকা লাগবে না, ডাকলে সেলিনাকে ডাকতে হবে।”

বন্ধুরা দূরে সরে গেলো

রহিমের বন্ধুরা আগে প্রতিদিন আড্ডা দিত। এখন তারা রাগ করে বলে—

“আগে রহিম ছিল আমাদের, এখন পুরোটা সেলিনার। ফোন দিলেও বলে, বউ একা আছে। এভাবে বন্ধুত্ব টিকবে?”

বন্ধুরা খোঁচা দিয়ে ডাকতে শুরু করলো—“বউ-পাগলা রহিম।”

পরিবারের ভেতরে আগুন

সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে রহিমের নিজের পরিবার থেকে।

তার মা বলে—

“বউ আসার পর থেকে ছেলেটা একেবারেই বদলে গেছে। আগে আমার জন্য বাজার করতো, এখন বউয়ের জন্যই বেশি করে।”

বাবা ভাবে—

“ছেলেটা এখন স্ত্রীর কথাই শোনে, আমাদের গুরুত্ব আর নেই।”

এমনকি ভাইয়েরাও হিংসা করে—

“আমরা তো বউ এনেও এমন সুখ পাইনি, রহিম কেন এতো পাগল হলো?”

রহিমের যন্ত্রণা

রহিম সব শুনতো, চুপ করে থাকতো।

সে জানতো, বউকে ভালোবাসা অপরাধ না। কিন্তু তবুও সমাজ, পরিবার, বন্ধুরা তার পেছনে লাগলো।

একদিন সেলিনা কাঁদতে কাঁদতে বললো—

“তুমি আমার জন্য এত কিছু করো, অথচ সবাই তোমাকে বউ-পাগলা বলে হাসে। আমি কষ্ট পাই।”

রহিম তখন হাসলো, বললো—

“মানুষ তো সবসময় অন্যের সুখে হিংসা করে। আজকে তারা আমাকে বউ-পাগলা বলে, একদিন দেখবে, এই ভালোবাসাই আমাদের শক্তি হবে। সমাজের কথায় কিছু যায় আসে না, কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

সময় কেটে গেলো। রহিম আর সেলিনা সুখে সংসার করলো।

সমাজ, পরিবার, বন্ধু—সবাই ধীরে ধীরে বুঝলো, আসলে রহিম ভুল করেনি।

কারণ যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকে, সেখানে সংসার টিকে যায়।

আর হিংসা করা মানুষগুলো কেবল নিজেদের দুঃখ আর অপূর্ণতাই প্রকাশ করে।

শিক্ষা:

বউকে যত্ন করা অপরাধ নয়। বরং সেটাই একজন স্বামীর আসল দায়িত্ব।

মানুষ যতই হিংসা করুক, দিনশেষে সমাজ নয়, জীবনসঙ্গীই তোমার পাশে থাকবে।