টাকার দামে স্ত্রী
একটা বড় শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া সোহেল ছোটবেলা থেকেই শুনত –
“ভালো চাকরি করো, টাকা কামাও, তাহলেই ভালো বউ পাবে।”
এই কথাটা তার মাথায় এতটাই গেঁথে যায় যে জীবনের লক্ষ্য হয়ে যায় শুধু টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে সোহেল চাকরি নেয়, রাতদিন খেটে প্রচুর টাকা রোজগার শুরু করে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা নেই, বই নেই, ছুটি নেই – শুধু কাজ আর টাকা। কয়েক বছর পর সোহেল যখন অনেক টাকার মালিক হলো, তখন সত্যিই তার জীবনে প্রবেশ করল এক অবিশ্বাস্য সুন্দরী নারী, নাম নীলা। সবাই বলত, “ওই মেয়েটা তো স্বপ্নের মতো! তুমি ভাগ্যবান।”
প্রথম দিকে সবকিছু মধুর ছিল। দামি উপহার, বিদেশ ভ্রমণ, রেস্তোরাঁ – যা যা নীলা চাইত, সোহেল এনে দিত। কিন্তু ধীরে ধীরে সোহেল লক্ষ্য করল, নীলা তার কেমন আছেন জিজ্ঞেস করে না, শুধু বলে, “নতুন গাড়িটা কবে আসছে?” বা “এই মাসে বোনাস কত?”
একদিন সোহেলের ব্যবসায় বড় ধাক্কা লাগে। কয়েক মাসে তার আয় কমে যায়। ঠিক তখনই নীলার আচরণ বদলে যায়।
তার কণ্ঠে আর মাধুর্য নেই, সোহেলের প্রতি মমতা নেই।
একদিন সকালে নীলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেল, বলে গেল শুধু একটি বাক্য –
“আমি বিলাসী জীবনের জন্য বিয়ে করেছি, কষ্টের জীবনের জন্য না।”
এই ঘটনাটা সোহেলকে বদলে দেয়।
সে বুঝতে পারে –
সে শুধু টাকা নয়, একটা সুন্দর সম্পর্কও হারিয়েছে, কারণ তার জীবনের ভিত্তিই ছিল ভুল বিশ্বাসের ওপর –
“যতো টাকা, ততো সুন্দর স্ত্রী।”
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সোহেল আবার উঠে দাঁড়ায়। এবার তার জীবনযাপনের ধরণ বদলে যায়। কাজ করে, কিন্তু সম্পর্কের জন্যও সময় দেয়।
একদিন তার সঙ্গে পরিচয় হয় লাজুক, সাধারণ এক মেয়ের – রুমানা। সে হয়তো রূপে নীলার মতো নয়, কিন্তু মানুষের প্রতি যত্ন আর সম্মানে ভরা। রুমানা সোহেলকে বলে –
“তুমি মানুষ হিসেবে কেমন, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। টাকা পরে আসবে।”
সোহেল প্রথমবার বুঝল, সত্যিকারের সৌন্দর্য থাকে মুখে নয়, মনে।
এবং সমাজের ‘যতো টাকা, ততো সুন্দর স্ত্রী’ এই কথাটা কেবল একটা ভুল মানসিকতার প্রতিফলন।
বার্তা:
আজকের সমাজে অনেক সময় টাকা আর সম্পর্ককে গুলিয়ে ফেলা হয়। টাকা সম্পর্ককে আরামদায়ক করতে পারে, কিন্তু সম্পর্ককে সুন্দর করতে পারে না। সত্যিকারের ভালোবাসা আসে মানুষের ভেতরের গুণ থেকে, যা টাকার মাপে ধরা যায় না।