সুন্দরীর ছদ্মবেশ
শহরের এক অচেনা কোণে রাতের আঁধারে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু মুখ। আলো ঝলমলে কোলাহল থেকে একটু দূরে, যেন ছায়ার মতো তারা মিশে থাকে অন্ধকারে। এরা সেই নারীরা, যাদের সৌন্দর্যে প্রথম দেখায় মনে হয় দেবীর মতো — হাসলে বুক কেঁপে ওঠে, চোখে চোখ পড়লে মনে হয় স্বপ্নের ভেতরে হারিয়ে গেছি। কিন্তু তাদের আসল রহস্য লুকিয়ে আছে মুখোশের আড়ালে।
রফিক নামের এক যুবক ছিলো এই গল্পের শুরুতে। সে সাধারণ এক চাকরিজীবী, রাতের শিফট শেষে প্রায়ই একা বাড়ি ফিরতো। এক রাতে তার সামনে এসে দাঁড়াল এক নারী। সাদা পোশাক, কাঁধ পর্যন্ত চুল, ঠোঁটে অদ্ভুত মায়াবী হাসি।
— "আপনি কি আমাকে একটু রাস্তা দেখিয়ে দেবেন?" — মিষ্টি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল নারী।
রফিক থেমে গেলো। মনে হলো তার চোখের ভেতর যেন এক অদ্ভুত শক্তি টানছে।
নারীটি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। তার চলার ভঙ্গি ছিলো অস্বাভাবিক সুন্দর, এতটাই যে রফিক মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। কিন্তু হঠাৎই সে দেখলো — নারীর পায়ের নিচে ছায়া নেই! তার শরীর আছে, কিন্তু আলো যখন পড়ে, ছায়া দেখা যায় না।
রফিকের বুক ধক ধক করতে লাগলো। ভয় যেন পা জড়িয়ে ধরল। নারীটি আবার বলল, এবার কণ্ঠস্বরটা ভারী আর শীতল—
— "তুমি কি আমার সঙ্গে চলবে?"
রফিক আর কিছু বলতে পারলো না। নারীর হাত বাড়ানো দেখলো। হাতটা স্বাভাবিক নয়, অদ্ভুত লম্বা নখ আর ফ্যাকাশে রঙ। রফিক দৌড়ে পালাতে শুরু করল। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো নারীটি দৌড়াচ্ছে না, কিন্তু তার চোখ দুটো জ্বলছে আগুনের মতো।
পরদিন সকালে রফিক অসুস্থ হয়ে পড়ল। শরীর দুর্বল, চোখের নিচে গভীর কালি, রাতে ঘুমাতে গেলেই একই নারীকে দেখে। একদিন আয়নায় তাকিয়ে সে চমকে উঠল — আয়নার ভেতর দাঁড়িয়ে আছে সেই নারী, অথচ ঘরে কেউ নেই।
গ্রামের বয়স্করা বলে, এরা হলো “মায়াবিনী”। সুন্দর চেহারা দিয়ে তারা মানুষকে ফাঁদে ফেলে। কেউ তাদের প্রেমে পড়ে জীবন শেষ করেছে, কেউ আবার পাগল হয়ে গেছে। তারা আসলে মানুষের রক্ত আর আত্মা খোঁজে।
রফিকের গল্প এখানেই শেষ হয়নি। শেষবার তাকে দেখা গিয়েছিলো সেই একই জায়গায়, যেখানে প্রথম নারীটির সঙ্গে দেখা হয়েছিলো। কিন্তু এবার সে একা ছিলো না। তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো সেই রহস্যময় সুন্দরী — ঠোঁটে ভয়ংকর হাসি নিয়ে। আর তার চোখ দুটো অস্বাভাবিক লাল হয়ে জ্বলছিলো।
সেই রাতের পর থেকে রফিক আর কখনো বাড়ি ফেরেনি।
মনে রাখা ভালো: সব সুন্দর জিনিসই নিরাপদ নয়। কিছু সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ভয়ংকর ছায়া, যেগুলো আমাদের মুগ্ধ করে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে টেনে নেয়।
