গল্প: "আমি হারাইনি, শুধু বদলে গেছি"
তানজিলা, একজন শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কড়া আলোতে নয়, সে আলো ছড়াত নিজস্ব নরম উপস্থিতিতে। সে উচ্চশিক্ষিত ছিল না, কিন্তু মানুষের আবেগ বোঝার মতো জ্ঞান ছিল তার চোখে।
গল্পটা শুরু হয় তখন, যখন তার বয়স মাত্র ২২। এক পারিবারিক আলোচনায় বিয়ে ঠিক হয় তৌফিক নামের এক ব্যাংক অফিসারের সঙ্গে। চেহারায় স্মার্ট, কথায় ভদ্র, পরিবারে সচ্ছলতা—সব মিলিয়ে 'সুসংগঠিত' একটি পরিবার।
তানজিলার ছোট ছোট স্বপ্ন ছিল।
সন্ধ্যায় দু'কাপ চা, বারান্দায় বসে হাসি, একসাথে বাজার করা, স্বামীকে নিজের বানানো কবিতা শোনানো।
কিন্তু বাস্তবতা ছিল অন্যরকম।
বিয়ের পর প্রথম কিছুদিন তৌফিক খুব ব্যস্ত থাকে, পরে সেই ব্যস্ততা পরিণত হয় অবহেলায়।
তার পরিবার তানজিলাকে ঠিক করে দেয় কী পড়বে, কেমন করে কথা বলবে, কার সঙ্গে মিশবে, এমনকি কীভাবে হাসবে।
প্রথম কিছুদিন সে সব মেনে নিয়েছিল। সে ভেবেছিল—একদিন ভালোবাসা সব সহজ করে দেবে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে বুঝতে শিখে—এই পরিবারে সে একজন মানুষ নয়, কেবল একজন “মানিয়ে নেওয়ার মেশিন”।
তৌফিক কখনো জিজ্ঞাসা করেনি,
— “তুমি আজ কেমন আছো?”
— “তুমি কি কিছু লেখো না এখন আর?”
— “তোমার কোনো স্বপ্ন ছিল?”
তার বদলে তৌফিক বলত,
— “তুমি ঘরের বাইরে গেলে, লোকে কী বলবে?”
— “তুমি বেশি চুপচাপ, আমার মা তো বলেছে তুমি অহংকারী।”
— “তোমার চাকরি দরকারই বা কেন? আমি কি ইনাফ দিচ্ছি না?”
তানজিলা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল নিজেই নিজের ভিতর। দিনের পর দিন চুপ থেকে, মনের কথা না বলে সে একটা জীবন্ত শরীর হয়ে উঠেছিল—যার মুখে হাসি থাকত, চোখে ক্লান্তি, আর বুকে বোঝা।
একদিন দুপুরে, ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে ছিল বারান্দায়। হঠাৎ হাওয়া লাগল চুলে, আর সেই মুহূর্তে তার মনে হলো—"আমি কি পুরো জীবনটাই শুধু মানিয়ে নেওয়ার জন্য কাটিয়ে দেব?"
সেই রাতেই সে একটা চিঠি লেখে—তৌফিকের জন্য না, নিজের জন্য।
চিঠিতে লেখা ছিল:
> “তুমি বলেছিলে আমি বদলে গেছি। না, আমি বদলাইনি—আমি শুধু নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।
আমি আর আগের মতো হাসতে পারি না, কারণ আমার হাসির নিচে জমে আছে বহু বছর চেপে রাখা কষ্ট।
আমি একদিন ফিরে যাবো—নিজের কাছে। হয়ত তুমি থাকবা না সেখানে, কিন্তু আমি থাকবো। আমি বাঁচবো, একবার অন্তত নিজের মতো।”
সকাল বেলা সে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে—কোনো অভিমান নিয়ে নয়, বরং নিজেকে আরেকবার ভালবাসার প্রয়াস নিয়ে।
আজ তানজিলা একটি ছোট স্কুলে শিক্ষকতা করে।
রাতের বেলা আবার লেখে—নিজের জন্য, কোনো শোনার মানুষ না থাকলেও।
তার ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে লেখা—
"Everyone wanted me to be perfect. No one asked if I was happy."
---
এই গল্পটা অনেক তানজিলার গল্প—যাদের কণ্ঠ রোজ চেপে রাখা হয়, যাদের ভালোবাসা বুঝে না কেউ।
তারা কথা বলে না, কিন্তু একদিন হঠাৎ চলে যায়। আর ফিরে আসে এক নতুন রূপে—ভাঙা নয়, বরং নির্মিত।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘গল্পের রাজ্য.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com
এমন মন ছুয়ে যাওয়া গল্প পরতে ভিজিট করুন ক্লিক