গল্প: "অপমানের প্রতিধ্বনি"
শাহরিয়ার, নাম শুনলে এক সময় বন্ধুরা বলত—"ওর চোখে লজ্জা নাই, মুখে আর বাছ-বিচার নাই!"
সে ছিল রাস্তাঘাটের রাজার মতো, দুই বন্ধু পাশে দাঁড়ালে রাস্তায় হাঁটতে থাকা মেয়ে বা দম্পতিদের দিকে ইশারা করে হেসে বলত:
— “এই ব্যাটা কোথা থেকে এমন মাল পাইছে?”
— “বউটা একদম ভেজা পান্তার মতো লাগতেছে রে ভাই!”
— “চোখে টিন দিয়া ঘুমাও নাকি? রাস্তায় বউ নিয়া ঘোর?”
— “এই বউটা একা পাইলেই আমি দেখায় দিতাম আসল সুখ কাকে কয়!”
এসব তার কাছে ছিল মজা, স্টাইল, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে বীরত্ব দেখানো।
সে ভাবত, এসব বলে সে কারো কী ক্ষতি করছে?
---
🌪️ সময় কেটে যায়...
বয়স বাড়ে, একসময় নিজের দোকান, আয় রোজগার করে সে সংসার শুরু করে। বিয়ে হয় রাবেয়া নামের এক নম্র স্বভাবের মেয়ের সাথে।
শাহরিয়ার অনেক কিছু বদলেছিল। রাবেয়াকে খুব ভালোবাসত। একদিন সে ভাবল,
“চলো তো, স্ত্রীকে নতুন শাড়ি কিনিয়ে ঘুরে আসি শহরটায়।”
হাত ধরে রাস্তায় হাঁটছিল। স্ত্রী তার বুকের পাশে মাথা রাখে, হালকা হাসি মুখে। হঠাৎ পাশের চায়ের দোকান থেকে এক তরুণের কণ্ঠ:
— “ভাইরে বিয়া কইরাই প্রেম শুরু?”
— “ভাবিরে বাইরায়েন না ভাই, রাস্তায় নষ্ট চোকা মানুষ অনেক।”
— “এইভাবিরে নিয়া একটু ঘোরাও ভাই, আমাদের ও তো চোখ আছে!”
এক মুহূর্তে শাহরিয়ারের শরীর কেঁপে উঠে। গলা শুকিয়ে যায়। স্ত্রীর হাত শক্ত করে ধরে, কিন্তু রাবেয়ার চোখে পানি… ঠোঁট কাঁপে, কিছু বলে না।
তখন শাহরিয়ার চারপাশে তাকিয়ে খুঁজে ফিরতে থাকে পুরোনো নিজেকে—ওই একই কথা, ওই একই ভঙ্গি, ওই একই অপমান — আজ তার নিজের ঘরে ঢুকে গেছে।
সে মাথা নিচু করে চলে আসে। রাতে রাবেয়া বলে:
— “তোমার স্ত্রীর চোখের জল আজ দেখলে, তুমি কি ভাবতে পারো অন্য কারো বোনও কখনো এইরকম কেঁদেছে... তোমার কথায়?”
---
🌑 রাত গভীর, কিন্তু ঘুম নেই...
শাহরিয়ার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদে। তার মনে পড়ে যায়, কত মেয়ে কাঁদে নাই তার কথায়?
সে নিজের ডায়েরিতে লিখে:
> "আমার মুখের নোংরা কথাগুলো আজ আমার স্ত্রীর কানে বাজে, আর আমার ভিতরটা পুড়ে যায়। আমি একসময় যাকে অপমান করতাম, আজ আমি সেই অপমানিত মানুষ।"
---
🔄 পরিবর্তন...
এরপর থেকে শাহরিয়ার আর আগের মতো নেই। সে দোকানে একটা প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেয়:
"নারী সম্মান নষ্ট করা নয়, রক্ষা করো। কারণ কাল সে হয়তো হবে তোমার প্রিয়তমা।"
সে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের কাহিনি প্রকাশ করে। ছোট ছোট ছেলেরা তাকে দেখে শিক্ষা নেয়।
একদিন এক তরুণ এসে বলে:
— “ভাই, আমি আগেও বাজে কথা বলতাম মেয়েদের দেখে, কিন্তু এখন আর বলি না। আপনি শিখিয়ে দিয়েছেন—সম্মান কী।”
---
🎯 শেষ কথার শিক্ষা:
"নোংরা ভাষা দিয়ে মানুষকে ছোট করা যায়, কিন্তু নিজের ছোট মনটা ঢেকে রাখা যায় না।"
সমাজে প্রতিটি মেয়েই কারো মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা।
একটা বাজে কথা শুধু মুখের আওয়াজ নয়—তা একটা হৃদয় ভেঙে দেয়। আর সেই হৃদয়ের কান্না একদিন নিজের ঘরে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘গল্পের রাজ্য.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com
এমন মন ছুয়ে যাওয়া গল্প পরতে ভিজিট করুন ক্লিক