টাকা চিনে – এক নারীর কাহিনি
রূপার জীবনটা ছিল একসময় অনেক সহজ। একটা ছোট চাকরি করত, সংসার ছিল মাটির মতো সাদামাটা। কিন্তু একদিন হঠাৎ ভাগ্য তার দিকে হাসল—একটা জমি বিক্রি করে হাতে এল অনেক টাকা। সেই টাকা যেন ওর জীবনকে রাতারাতি বদলে দিল।
রূপা আগে যেখানে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ভাবত, এখন মানুষ তার টাকাকে নিয়েই বেশি ভাবতে শুরু করল। অফিসে, আত্মীয়দের মধ্যে, এমনকি পাড়ার মানুষও হঠাৎ করে ওকে অন্য চোখে দেখতে লাগল।
এমন সময় অয়ন নামের একজন পুরুষ তার জীবনে এল। অয়ন খুব ভদ্র, খুব যত্নশীল—এমনটাই মনে হল রূপার কাছে। সে রূপাকে বলত,
“তুমি ছাড়া আমার কিছুই নেই… তুমি আমার বাঁচার কারণ।”
রূপা ভেবেছিল অবশেষে কেউ তাকে মানুষ হিসেবে ভালোবেসেছে। সে নিজের সব স্বপ্ন, সব বিশ্বাস অয়নের হাতে তুলে দিল। এমনকি টাকাটারও অনেকটা অয়নের উপর ভরসা করে খরচ করতে শুরু করল।
প্রথমদিকে অয়ন ওকে খুব আগলে রাখত। কোথাও গেলে হাত ধরে রাখত, অসুখ-বিসুখে পাশে থাকত। কিন্তু ধীরে ধীরে অয়নের আসল চেহারা ফুটে উঠতে লাগল। সে টাকা ছাড়া রূপাকে গুরুত্ব দিত না। উপহার চাইত, দামী জায়গায় নিয়ে যেতে বলত, বারবার নতুন নতুন খরচের অজুহাত বানাত।
রূপা বুঝতে পারছিল, অয়নের ভালোবাসাটা তার জন্য নয়—তার টাকার জন্য।
কিন্তু মন তো সবসময় চোখের মতো স্পষ্ট নয়। মনের ভরসা ভাঙতে সময় লাগে।
একদিন সব সত্যি প্রকাশ পেল। রূপা হঠাৎ জানতে পারল, অয়ন নাকি আরেকজন মহিলার সাথেও সম্পর্ক রেখেছে—কারণ সেই মহিলারও প্রচুর টাকা আছে। রূপার বুক ভেঙে গেল।
সে বুঝল, এতদিন যে মানুষকে নিজের জীবন ভেবেছিল, সে তাকে মানুষ হিসেবে চিনেনি—চিনেছিল শুধু টাকাকে।
টাকা দিয়ে হয়তো মানুষকে টেনে রাখা যায় কিছু সময়ের জন্য,
কিন্তু টাকা কখনো হৃদয়কে বেঁধে রাখতে পারে না।
রূপা একা হয়ে গেল। তার হাতে এখনো কিছু টাকা আছে, কিন্তু সেই টাকার কোনো মূল্য নেই তার কাছে। কারণ সে জেনেছে—
টাকা সুখ কিনে দিতে পারে না, আর যাদের ভালোবাসা টাকার উপর দাঁড়িয়ে থাকে, তারা আসলে কখনো ভালোবাসে না।