“স্নেহের ছায়া”
গ্রামের শান্ত কোণে, ছোট্ট একটি বাড়ি ছিল রফিক আর সালমার। রফিক ছিলেন পেশায় একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, আর সালমা ছিলেন গৃহিণী। তাদের বিয়ে হয়েছিল প্রায় ১০ বছর আগে, কিন্তু আজও গ্রামের মানুষ বলে — “ওদের ভালোবাসা নতুন বিয়ের মতো।”
শুরুর দিনগুলো
বিয়ের প্রথম দিন থেকেই সালমা বুঝে নিয়েছিল — সংসার শুধু সুখের স্বপ্ন নয়, দায়িত্বের পাহাড়ও বটে। সে জানত, স্বামীকে ভালোবাসা শুধু মুখের কথা নয়, বরং প্রতিদিনের যত্ন, সম্মান আর পাশে থাকা দিয়েই ভালোবাসা টিকে থাকে।
প্রতিদিন ভোরে উঠে সালমা প্রথমেই রফিকের জন্য চা বানাতো। চায়ের কাপে হাত রাখতেই রফিকের চোখে পড়ত সালমার মিষ্টি হাসি। তার কাছে এটা ছিল দিনের সেরা মুহূর্ত।
সম্মান আর কথা শোনা
রফিক যখন স্কুল থেকে ফিরত, সালমা মন দিয়ে তার দিনের গল্প শুনত। কখনো ক্লাসে কোনো সমস্যা হলে সে পরামর্শ দিত না, বরং মনোযোগ দিয়ে শুনত, যাতে রফিক মনে করে — “আমার কথা কেউ সত্যিই গুরুত্ব দিয়ে শোনে।”
রফিকের কোনো সিদ্ধান্তে সালমা কখনো তুচ্ছ করত না। যদি ভুলও হতো, প্রথমে সমর্থন করত, পরে নরমভাবে বলত — “এইভাবে করলে হয়তো ভালো হতো।” রফিক কখনো অপমানিত বোধ করত না, বরং আরও শ্রদ্ধা করত।
সেবা ও যত্ন
সালমা স্বামীকে কখনো ক্ষুধার্ত থাকতে দিত না। রফিক যা পছন্দ করত, সুযোগ পেলেই রান্না করত। অসুস্থ হলে নিজের ঘুম, নিজের আরাম ভুলে গিয়ে সারারাত মাথায় পানি দিয়ে জ্বর কমাত।
শীতের দিনে রফিক স্কুলে যাওয়ার আগে সালমা চুপিচুপি তার জুতার ভেতরে গরম পানি ভর্তি বোতল রাখত, যেন পা ঠান্ডা না হয়। এসব ছোট ছোট যত্ন রফিককে ভেতর থেকে কৃতজ্ঞ করত।
সবসময়ে পাশে থাকা
একবার রফিক স্কুলে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছিল। সবাই দূরে সরে গেলেও, সালমা এক কদমও পিছিয়ে যায়নি। সে বলেছিল —
"চাকরি থাক বা না থাক, আমি তোমার সাথে আছি। আমরা একসাথে কিছু না কিছু করব।"
এই কথাটা রফিকের হৃদয়ে গেঁথে যায়।
ভালোবাসার প্রতিদান
রফিক বুঝে গিয়েছিল — সালমা শুধু স্ত্রী নয়, তার সবচেয়ে বড় বন্ধু, সাহস আর আশ্রয়। তাই রফিকও সালমাকে সব ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিত। বাজারে গেলে নিজের জন্য কিছু না কিনে সালমার জন্য শাড়ি, চুড়ি কিনত।
কোনো অনুষ্ঠানে গেলে গর্ব করে বলত —
"এই আমার স্ত্রী, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।"
শিক্ষা
এই গল্প আমাদের শেখায় — স্বামীর ভালোবাসা পেতে চমৎকার সৌন্দর্য নয়, দরকার সম্মান, যত্ন আর আন্তরিকতা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তখনই শক্ত হয়, যখন দু’জন একে অপরের পাশে থাকে সুখে-দুঃখে, আর একে অপরকে গুরুত্ব দেয়।
মনে রাখবেন:
💠 ভালোবাসা দাবি করা যায় না, অর্জন করতে হয়।
💠 সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায়।
💠 যত্নের বিনিময়ে মেলে কৃতজ্ঞতা ও হৃদয়ের টান।