এই নারী সাপের চেয়ে ও ভয়ংকর | ভালোবাসার নামে খেলা করার শাস্তি

 ভালোবাসার মুখোশে ভয়ংকর নারী

ভালোবাসার মুখোশে ভয়ংকর নারী

শহরের এক প্রান্তে থাকত তানিয়া—যে ছিল সৌন্দর্যের এক জীবন্ত প্রতিমূর্তি। লম্বা চুল, উজ্জ্বল ত্বক, তীক্ষ্ণ চোখ—যে-ই প্রথমবার তাকে দেখত, তার মনে হতো, এ যেন সিনেমার নায়িকা। ছোটবেলা থেকেই সে জানত, সে সুন্দরী, আর এই সৌন্দর্য দিয়েই সে দুনিয়া জয় করতে পারবে।

কিন্তু তানিয়ার সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এমন এক অহংকার আর কৌশল, যা ধীরে ধীরে সাপের মতো বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। সে বিশ্বাস করত, ভালোবাসা মানেই কারো মন জয় করে তাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা, তারপর তার কাছ থেকে যা চায় তা আদায় করে নেওয়া।

প্রথম শিকার

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন রাকিব নামে এক তরুণ তার প্রেমে পড়ে। রাকিব সৎ, পরিশ্রমী, আর স্বপ্নবাজ ছিল। তানিয়া তাকে মুগ্ধ করে ফেলল—প্রথমে মিষ্টি হাসি, তারপর যত্ন, তারপর ভুয়া ভালোবাসার অভিনয়। রাকিব তার জন্য সব করত—দামী উপহার কিনত, পড়াশোনার খরচ দিত, এমনকি নিজের ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখা টাকা পর্যন্ত তানিয়ার হাতে তুলে দিত।

কিন্তু কয়েক মাস পর, যখন রাকিবের হাতে আর তেমন টাকা রইল না, তানিয়ার মন সরে গেল। হঠাৎ সে রাকিবকে বলল—

“তুমি আমাকে আর সুখী রাখতে পারছো না, আমি এমন কাউকে চাই যে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।”

তারপর একদিন কোনো কথা না বলে অন্য এক ধনী ব্যবসায়ীর সাথে সম্পর্ক শুরু করল।

রাকিব ভেঙে পড়ল, তার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেল, আর তানিয়া এগিয়ে গেল তার পরবর্তী শিকারের দিকে।

ধনী প্রেমিকের সাথে খেলা

ব্যবসায়ী আজিজ ভাই ছিলেন বয়সে বড়, কিন্তু টাকা ছিল অফুরন্ত। তানিয়া তার জীবনে প্রবেশ করল ঠিক এক রঙিন প্রজাপতির মতো—যা দেখে মনে হবে নিখাদ ভালোবাসা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আজিজ ভাই বুঝলেন, তানিয়া তার জীবনে এসেছে শুধু ভোগবিলাসের জন্য। দামি গহনা, বিদেশ ভ্রমণ, বিলাসবহুল গাড়ি—এসবই তার চাওয়া।

তানিয়া জানত, সৌন্দর্যের মোহে আজিজ ভাই অনেক কিছু মেনে নেবেন। কিন্তু ধীরে ধীরে আজিজ ভাই বুঝলেন, এই নারী কেবল নেয়, দেয় না—তার চোখে ভালোবাসার একফোঁটা জলও নেই। শেষমেশ যখন আজিজ ভাইয়ের ব্যবসা কিছুটা খারাপ হলো, তানিয়া অদৃশ্য হয়ে গেল—যেন সে কখনো ছিলই না।

সৌন্দর্যের পতন

বছর গড়াল। তানিয়ার বয়স চল্লিশের দিকে এগোল। আগে যে চেহারায় সবার চোখ আটকে যেত, সেখানে এখন ভাঁজ পড়েছে, চোখের নিচে কালো দাগ, চুলে সাদা রেখা। বয়সের সাথে সাথে আগের মতো প্রস্তাব আর আসে না।

যারা একসময় তার চারপাশে ভিড় করত, তারা এখন সংসারী, সন্তান নিয়ে ব্যস্ত, কিংবা তরুণীদের দিকে মনোযোগী।

তানিয়ার ফোনে আর আগের মতো ডাক আসে না, সোশ্যাল মিডিয়ায় আগের ঝলমলে ছবি পোস্ট করলেও মানুষ তেমন গুরুত্ব দেয় না।

ভয়ংকর পরিণতি

একদিন খবরের কাগজে সে পড়ে—রাকিব, তার প্রথম প্রেমিক, এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। তার পাশে সুন্দর, শিক্ষিতা স্ত্রী আর দুই সন্তান। রাকিবের চোখে এখন তৃপ্তি আর গর্ব।

আজিজ ভাইও আবার ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন, এবং এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন, যে সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়ে তার পাশে আছে।

তানিয়া একা—শূন্য ফ্ল্যাটে বসে পুরনো ছবিগুলো দেখে। ছবির হাসি যেন তাকে বিদ্রূপ করছে—

“তুমি ভেবেছিলে সৌন্দর্যই তোমার শক্তি, কিন্তু সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী। সত্যিকারের ভালোবাসা, সততা আর সম্পর্কই জীবনের আসল সম্পদ।”

তার সৌন্দর্যের অহংকার তাকে সম্পর্ক থেকে সম্পর্কের পথে ঠেলে দিয়েছিল, কিন্তু শেষে সেই অহংকারই তাকে ফেলে দিয়েছে এক ভয়ংকর একাকীত্বের অন্ধকারে।