নারী রাগ কতো দূর আর পুরুষের কতো দূর, পুরুষ এর রাগ কতটা

ফকির থেকে বাদশাহ

ফকির থেকে বাদশাহ

একসময় শহরের সবার চোখে সবচেয়ে সুন্দর প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল তানভীর আর মিথিলা।

তাদের গল্পটা এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, কলেজের নতুনরা বলত—

“এই দুজন মানেই যেন একে অপরের ছায়া।”

তানভীর ছিল গরিব পরিবারের ছেলে। বাবার ছোট্ট চাকরি, সংসারের অগাধ টানাপোড়েন। তবুও মিথিলার জন্য তার ভালোবাসায় কখনো ঘাটতি ছিল না।

হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম কিনে খাওয়ানো হোক বা শেষ টাকার উপর একটা লাল গোলাপ—তানভীরের মনে হতো সে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী প্রেমিক।

সেই কালো দিন

একদিন হঠাৎ ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি থেকে বড় ঝগড়া লেগে গেল।

মিথিলা রাগে ফুঁসে উঠল, গলা কাঁপছে, চোখে আগুন—

মিথিলা:

“তুই কী ভাবিস তানভীর? তুই আমাকে সারাজীবন এই দারিদ্র্যের মধ্যে রাখবি? তুইতো একটা ফকির!

আমি চাইলে তোর থেকে হাজার গুণ ভালো ছেলে পাবো, গাড়ি-বাড়ি সব থাকবে। আমার জীবন তুই নষ্ট করতে পারবি না।”

তানভীর শুনল, কিন্তু চুপ থাকল না। চোখে পানি, কিন্তু বুকটা শক্ত করে উত্তর দিল—

তানভীর:

“হয়তো আজ আমি ফকির। হয়তো আমার হাতে টাকা নেই। কিন্তু শোন মিথিলা, পুরুষ রাগ করলে বাদশা হয়। আজকের এই অপমান আমার বুকের মধ্যে আগুন হয়ে রইল। আমি এমন কিছু হবো যে, তুই একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখে কাঁদবি।

মনে রাখিস, তোর এক রাগে তুই হয়তো ভুল মানুষ বেছে নিবি, আর সেই ভুলের শাস্তি তোর জীবনভর বহন করতে হবে।”

এভাবেই ব্রেকআপ হলো।

আলাদা হওয়ার পর

মিথিলা খুব দ্রুতই একটা ধনী ছেলের সাথে বিয়ে করে ফেলল। নতুন সংসারে প্রথম দিকে সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছিল। গাড়ি, শপিং, রেস্টুরেন্ট—সবই ছিল, শুধু মনের শান্তি ছিল না।

তার স্বামী টাকা দিত ঠিকই, কিন্তু কখনো সময় দিত না। মিথিলার হাসিখুশি মুখ ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

অন্যদিকে, তানভীর দিন-রাত এক করে পড়াশোনা করল, চাকরির চেষ্টা করল, পরে ব্যবসা শুরু করল। কষ্ট, পরিশ্রম, ঘাম—সব মিলিয়ে একসময় তানভীর এমন জায়গায় পৌঁছাল যেখানে মানুষ তাকে ডাকল “তানভীর সাহেব, দেশের শীর্ষ উদ্যোক্তা।”

কয়েক বছর পরের দেখা

একদিন মিথিলা মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়ে হঠাৎ সামনাসামনি পড়ে গেল তানভীরের সাথে।

তানভীর পরেছিল দামী স্যুট, পাশে দামি গাড়ি, সঙ্গে কয়েকজন সহকারী।

মিথিলা থমকে দাঁড়াল, বুকটা কেঁপে উঠল। মনে পড়ল সেই দিন, যেদিন সে রাগ করে বলেছিল—

“তুই তো ফকির, তোর থেকে ভালো ছেলে আমি পাবো।”

কিন্তু আজ দাঁড়িয়ে থাকা তানভীরকে দেখে মনে হলো, সে-ই আসল বাদশাহ।

তানভীর শুধু হেসে বলল:

“কেমন আছিস?”

মিথিলা চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলল—

“ভালো আছি…”

কিন্তু তার বুকের ভেতর তখন হাহাকার—

ভালো কি সত্যিই আছে?

যার সাথে বিয়ে করল, সে তো কেবল ধনী, কিন্তু ভালোবাসতে জানে না।

কষ্টের সত্য

মিথিলা আজীবন আপসোস করতে লাগল।

সে বুঝল—

“নারী যখন রাগ করে, তখন নিজের হাতে নিজের জীবনটা নষ্ট করে ফেলে।”

অন্যদিকে তানভীর প্রমাণ করল—

“পুরুষ যখন অপমান সহ্য করে রাগকে জেদ বানায়, তখনই সে ফকির থেকে বাদশা হয়।”

শেষ লাইন

মিথিলার চোখ ভরা অশ্রু, বুক ভরা আফসোস।

তানভীর শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসল—

“কখনো কখনো হারানো মানুষকে নয়, হারানো কথাগুলোই জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়ে যায়।”