গল্প: "অবহেলার ছায়ায় অন্য কাউকে ভালো লাগা"
রাফি ও মুনা — আট বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে হয়েছিল।
রাফি ছিল সাধারণ একজন অফিস কর্মচারী, মুনা ছিল গ্র্যাজুয়েট, বিয়ের পর থেকেই গৃহিণী।
প্রথমদিকে সব ঠিকঠাকই চলছিল।
রাফি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সংসার চালাত, মুনাকে ছোট ছোট উপহার দিত, বিকেলে একসঙ্গে হাঁটতে বের হতো।
কিন্তু বছর দুয়েক পর মুনার মন বদলাতে শুরু করলো।
সে প্রায়ই বলত,
"তুমি কিছুই করতে পারো না। মানুষ এখন কোথায় চলে গেছে, আর তুমি আজো স্কুটিতে চড়ো?"
রাফি হাসিমুখে বলত,
"সবকিছু সময়মতো হবে, আমরা ধীরে ধীরে সব অর্জন করব।"
কিন্তু মুনা বদলাতে লাগল আরও দ্রুত।
❄️ অবহেলা জমতে শুরু করলো…
রাফি অফিস থেকে ফিরে মুনার মুখে হাসি খুঁজে পেত না।
উল্টো অভিযোগ, তাচ্ছিল্য, তুলনা আর খোঁটা।
"আমার বান্ধবীর স্বামী বছরে দুইবার বিদেশে ঘুরতে নিয়ে যায়, তুমি তো ঘুরতেই পারো না!"
রাফির মন ভেঙে যেত, কিন্তু মুখে কিছু বলতো না। সে ভাবত— সংসারে পুরুষের দায়িত্ব সহ্য করা, স্ত্রীর মন রাখা।
কিন্তু মুনা দিনে দিনে কেবল দূরে সরে যাচ্ছিল।
সে এখন নিজের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত, নিজের ছোট এক বান্ধবীমহলে গল্প করে, যেখানে রাফিকে নিয়ে ঠাট্টাও করতো।
রাফি বুঝতো— তাকে আর সে আগের মতো ভালোবাসে না।
কিন্তু তবুও চুপচাপ সব সহ্য করত।
🌩️ হঠাৎ করে দেখা...
এক অফিস মিটিংয়ে রাফির দেখা হয় তার পুরনো সহপাঠী তানিয়ার সঙ্গে।
তানিয়া এখন কর্পোরেট অফিসে চাকরি করে।
তানিয়া রাফিকে দেখে মুগ্ধ—
"তুই আগেও এত ভদ্র ছিলি, এখনো একই রকম আছিস! পরিবার কেমন?"
রাফি প্রথমে কেবল হাসিমুখে জবাব দিত।
কিন্তু আস্তে আস্তে তারা কথা বলা শুরু করলো।
তানিয়ার মধ্যে একরকম প্রশান্তি ছিল, সম্মান ছিল, শ্রদ্ধা ছিল।
তানিয়া সবসময় রাফির কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনতো।
একদিন বলল,
"তুই এত সুন্দর করে কথা বলিস, তোর স্ত্রী নিশ্চয়ই অনেক ভাগ্যবতী!"
রাফির মুখ নিস্তেজ হয়ে গেল। সে কোনো উত্তর দিল না।
💔 ভাঙনের শুরু...
রাফি এখন অফিস থেকে ফেরার সময় তানিয়ার সঙ্গে কথা বলে। মেসেজে হাসি খুঁজে পায়।
তানিয়া রাফিকে এমনভাবে গুরুত্ব দেয়, যেমনটা রাফি বহুদিন পায়নি।
তানিয়া তার সাফল্যে খুশি হয়, কষ্ট শুনলে মন খারাপ করে।
একদিন রাফি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে:
"আমি কি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি? না কি আমি কেবল মন খুঁজছি?"
সে জানতো, সে কিছু ভুল করছে। কিন্তু একইসঙ্গে সে এটাও জানতো—
"সে দীর্ঘদিন ধরে নিজের স্ত্রী থেকে শুধু অবহেলা আর অপমান পেয়েছে।"
🔥 যখন সব সামনে আসে...
একদিন মুনা রাফির ফোন দেখে ফেলে তানিয়ার মেসেজ:
"তুই থাকলে সব সহজ মনে হয়!"
মুনা রেগে চিৎকার করে উঠে,
"তুমি কী করছো এই মেয়ের সঙ্গে? তুমি কি এখন আমাকে ছাড়তে চাও?"
রাফি চুপচাপ বসে বলল:
"তুমি এত বছর ধরে আমায় অবহেলা করেছো, সম্মান করোনি, ভালোবাসোনি। এখন যখন কেউ আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন তুমি কষ্ট পাচ্ছো?"
মুনা চোখ বড় করে তাকিয়ে রইল।
সে কিছু বলতে পারল না।
☁️ শেষের আগে...
রাফি সিদ্ধান্ত নিল— সে সংসার ভাঙবে না।
তানিয়ার কাছে ক্ষমা চাইল—
"তুমি আমাকে বুঝেছো, ভালোবেসেছো, কিন্তু আমি এখনো এক সংসারের দায়িত্বে বাঁধা। আমি তোমায় কষ্ট দিতে চাই না।"
সে মুনাকে বলল:
"তুমি যদি চাও, আমরা আবার শুরু করতে পারি। তবে এবার তুমি বুঝে নাও— অবহেলা করতে করতে একদিন সম্পর্কটাকে ফাঁকা করে ফেলা যায়।"
মুনা স্তব্ধ হয়ে বসে রইল।
তার চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছিল।
গল্পের শিক্ষা
ভালোবাসা তখনই টিকে থাকে, যখন দুইজনই চেষ্টা করে।
শুধু একজন যদি চুপচাপ ভালোবেসে যায়, আর আরেকজন অবহেলা করে,
তাহলে একদিন সেই মানুষ অন্য কারো কদরে হারিয়ে যায়।