গল্পের নাম: অভিমান নয়, উপলব্ধি
বাবার অবহেলা
পৃথিবীতে সম্পর্কের গভীরতা পরিমাপ করা যায় না কথায় বা চোখে।
যাকে সবচেয়ে শক্ত ভাবা হয়,
সে-ই সবচেয়ে বেশি একা থাকে।
এ গল্প সেই একজনের,
যার ভালোবাসা ছিল নিঃশব্দ, অবহেলিত, কিন্তু কখনোই কৃত্রিম নয়।
---
একটা সময় ছিল, যখন আমি ‘বাবার ছেলে’ ছিলাম,
তখন আমার ছোট ভাই ছিল না।
আমি ছিলাম মা-বাবার চোখের তারা।
আমার আঁকা চিত্র, আবৃত্তি, স্কুলে নাম লেখানো—সবই ছিল আনন্দের উৎস।
কিন্তু ছোট ভাই জন্মের পর ছবির মতো সেই সময়টা বদলে গেল।
আমার হাত ধরা বাবা, এখন শুধু ছোট ভাইকে কোলে নেন।
মা বলতেন, “ও তো ছোট, ওকে একটু বেশি সময় দিতে হয়।”
আমি চুপ করে থাকতাম।
আস্তে আস্তে বুঝলাম,
আমার ভালোবাসা আমি চাইতে পারি না—
আমাকে শুধু দিতে হয়।
---
একদিনের ঘটনা:
স্কুলের ফাংশনে প্রথম পুরস্কার পেলাম।
রাতের খাবার টেবিলে বাবাকে খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে বললাম,
“বাবা, আমি ফার্স্ট হয়েছি!”
বাবা তখন ছোট ভাইয়ের খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত,
একবার তাকিয়েই শুধু বললেন,
“ভালো… ভাইকে দেখিস একটু, আমি আসছি।”
সেই ‘ভালো’ শব্দটাই তখন অনেক ঠান্ডা লাগল।
---
বড় হয়ে গেলাম—দায়িত্বে, চুপচাপ থেকে।
আমি যখন এইচএসসি পাশ করলাম,
বাবা বললেন, “চাকরি-বাকরি দেখিস, আমরা তো সামলাতে পারি না।”
আমি বোঝালাম, “আমি ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।”
তিনি বললেন, “ছোটটা তো আর্টসে পড়ছে, ওকে ভালো জায়গায় পড়াতে হবে।”
আমি আর কোনোদিন বাবার কাছে কিছু চাইনি।
দিনে দিন কাটে।
চাকরি পাই, চাকরি ছাড়ি, আবার পাই।
ছোট ভাই তখন বাবার টাকায় দেশের বাইরে গেল।
বিদেশে পাড়ি দেওয়ার আগে বাবা নিজে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিলেন।
আর আমি?
শুধু একবার বলেছিলাম,
“আমি অফিসে ঢুকেছি।”
বাবা তখন ফোনে ছোট ভাইয়ের IELTS স্কোর নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
---
একদিন ফোন আসে—বাবা গুরুতর অসুস্থ।
ভুলেও এক মুহূর্ত দেরি করিনি।
সেদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বাবা প্রথম আমার হাত ধরেছিলেন।
বুক ভরা চোখে তাকিয়ে বলেছিলেন—
“তুই কীভাবে এত শান্তভাবে সব সামলাস রে?”
আমি হেসেছিলাম।
বাবা কাঁদছিলেন।
বললেন—
“তুই সব সহ্য করেছিস, অথচ কিছু বলিসনি।
আমি তোকে চিনতেই পারিনি রে… আমি তো সারা জীবন শুধু ভাইটাকেই আগলে রেখেছি।”
আমি বললাম না, "ঠিক করেছো না",
বললাম—
“ভালোবাসা কাউকে একা করে দিলে সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় বাবা…”
---
ছোট ভাইও ফিরল।
এবার তাকেও দেখে চমকে উঠলেন বাবা—
আত্মবিশ্বাসহীন, দায়িত্ব এড়ানো একটা মানুষ।
যে শুধু পাওয়া শিখেছে, দেওয়া নয়।
তখনই বাবা বললেন—
“তোমাদের দুজনের কাছে আমি ঋণী।
একজন শিখিয়েছে কীভাবে ভালোবাসা দেওয়া যায়,
আরেকজন দেখিয়েছে আমার চোখে পর্দা ছিল কতটা…”
---
শেষ দৃশ্য:
বাবা মায়ের মুখে একদিন শুনি—
“ভালোবাসা সমান হলে পরিবার হয় ঘর,
আর একপাক্ষিক হলে হয় বোঝা।”
তাদের মুখে এখন আমার নাম,
আমার প্রতি গর্ব।
কিন্তু আমি গর্ব করি না,
আমি শুধু নিজের হৃদয়টাকে আজও আগের মতো রাখি—
নিঃশব্দ, শক্ত, কিন্তু ভালোবাসায় পূর্ণ।
---
এই গল্প শুধু এক ব্যক্তির নয়,
এটা সমাজের, পরিবারের, এবং অবহেলিত সন্তানের নিঃশব্দ যাত্রার প্রতিচ্ছবি।
ভালোবাসা চাইলে দিতে হয় সমানভাবে।
একপাক্ষিক ভালোবাসা কখনোই পরিবার তৈরি করে না।
কারণ পরিবার তখনই পূর্ণ,
যখন প্রতিটি সন্তানের চোখে জ্বলজ্বল করে সমান মর্যাদার আলো।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘গল্পের রাজ্য.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com
এমন মন ছুয়ে যাওয়া গল্প পরতে ভিজিট করুন ক্লিক