রাতে ভয় পেলে বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে
"যখন রাত ভয় নিয়ে আসে: ঘুম, একাকিত্ব আর অজানা আতঙ্কে ইসলামের আলোকিত পথ"
রাত গভীর হয়। বাতাস নিঃশব্দ হয়।
চারপাশের আলো নিভে গেলে শুধু একটা জিনিস জেগে থাকে — “ভয়”।
তুমি হয়তো একা একটা ঘরে শুয়ে আছো।
সব কিছু শান্ত, তবু তোমার ভেতরে কিছু একটা কাঁপে।
হয়তো মনে হয়—কেউ পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
হয়তো চোখ বুজলেই একটা মুখ, একটা আওয়াজ, একটা ছায়া চলে আসে।
এই অভিজ্ঞতা অনেকের। কিন্তু প্রশ্ন হলো: তখন কী করবে? কী বলবে? কোথায় যাবে?
আসো, ইসলাম কী বলে তা জানি, খুব সহজ আর বাস্তব উপায়ে।
---
১. ঘুমানোর আগে নিজেকে ঢেকে দাও আল্লাহর আলোতে
ইসলাম বলে, ঘুমানো মানে ছোট এক “মৃত্যু”। তাই ঘুমানোর আগেই নিজেকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিতে হয়।
যা করো:
বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে বলো:
اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
“আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।”
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি মরি (ঘুমাই) এবং বাঁচি (জেগে উঠি)।
(বুখারী)
তারপর পড়ো:
আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা ২:২৫৫)
সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস – তিনবার করে
তারপর হাত দিয়ে নিজের মাথা-মুখ-বুকে হালকা করে মুছে দাও।
এগুলো এমন এক ঢাল, যা শয়তান, জিন, খারাপ চিন্তা, দুঃস্বপ্ন—সব কিছুকে দূরে রাখে।
---
২. একা থাকলে ভয় লাগলে কি করবে?
রাতে যখন তুমি একা, ঘরে কারো অস্তিত্ব নেই—তবুও মনে হয় কেউ আছে... জানো জানালা হঠাৎ শব্দ করে... তখন কী করবে?
ইসলাম বলে:
বলো:
“আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম”
অর্থ: আমি আল্লাহর শরণ নিচ্ছি বিতাড়িত শয়তান থেকে।
তারপর চোখ বন্ধ করে বলো:
"হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল"
অর্থ: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনিই আমার রক্ষাকর্তা।
তুমি চাইলে মোবাইলে নিচের সূরাগুলো চালাতে পারো:
সূরা বাকারাহ (পুরো)
সূরা ইয়াসিন
সূরা জিন
কারণ: হাদিসে আছে—“যে ঘরে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়, শয়তান সে ঘরে থাকে না।” (মুসলিম)
---
৩. খারাপ স্বপ্ন বা ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত কিছু দেখলে করণীয়
অনেক সময় ঘুমের মধ্যে মনে হয় কেউ চেপে ধরছে, দম বন্ধ লাগে, কেউ ডাকছে, খারাপ স্বপ্ন আসে...
তখন যা করো:
ঘুম থেকে উঠে, বাঁ পাশে তিনবার হালকা ফুঁ দাও (যেন থুথুর মতো)
বলো:
“আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম”
সেই স্বপ্ন কাউকে বলো না
উঠে ওজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ো
এই কাজগুলো করলে, ইনশাআল্লাহ, সেই রাত নিরাপদে কাটবে।
---
৪. ঘরকে বানাও নিরাপদ ঘর—আল্লাহর আশ্রয়ে
ঘরে ঢোকার সময় বলো: “বিসমিল্লাহ”
(শয়তান বলে: এই ঘরে আমার জায়গা নেই)
খাবার খাওয়ার সময় বলো: “বিসমিল্লাহ”
(না বললে শয়তান খায় তোমার সঙ্গে)
রাতে দরজা বন্ধ করার সময় বলো: “বিসমিল্লাহ”
(তবেই সেই দরজা শয়তান খুলতে পারবে না)
দরজা-জানালায় হাত রেখে বলো:
“আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক”
(এই দোয়া জিন-শয়তানের ভয় থেকে রক্ষা করে)
---
৫. নিজের মনকে বোঝাও: “আমি একা না, আল্লাহ আছেন”
রাতে যখন মনে হয়, “আমি একা”—তখন নিজে নিজে বলো:
> “আমি কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো বন্ধু হলেও, আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে দেখছেন, শুনছেন, রক্ষা করছেন।”
---
৬. এমন কিছু যা সাধারণ মানুষ জানে না (ইউনিক টিপস)
ঘুমের আগে ঘরের কোণায় কোণায় “আয়াতুল কুরসি” পড়ে ফুঁ দিয়ে নাও।
(ঘরের প্রতিটি দিক যেন আল্লাহর রশ্মিতে ঘেরা থাকে)
ঘুমানোর আগে নিজের মাথায় হাত রেখে বলো:
“ইয়া আল্লাহ, যদি আজ রাত আমার শেষ হয়, তবে আমাকে মাফ করে দিও।”
এই কথা মনকে নরম করে, ভয় নয় বরং ভালোবাসা তৈরি করে।
নিজের বালিশের নিচে কুরআনের আয়াত লিখে রাখো।
(বিশেষ করে: আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক-নাস)
---
শেষ কথা: ভয় নয়, বিশ্বাস গড়ে তোলো
আতঙ্ক রাতকে নষ্ট করে দেয়, ঘুম কেড়ে নেয়, মন বিষিয়ে তোলে।
কিন্তু যারা জানে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের প্রতি কতোটা মেহেরবান—তারা বলে:
> “ভয়কে ভয় নয়, আল্লাহকে ভয় করো। তিনি থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না।”
তুমি একা না।
তুমি কখনোই একা ছিলে না।
তোমার পাশেই আছেন সেই মহান সত্তা—আল্লাহ।