গল্প: শেষে বুঝি…
রক্তের সম্পর্ক কি শুধু জন্মসূত্রে বাঁধা?
নাকি যত্ন আর সমান চোখে দেখার মধ্যেও তার সঠিক মানে তৈরি হয়?
আমার নাম কেউ জানে না,
জানার প্রয়োজনও পড়ে না,
কারণ আমি সেই "বড় ছেলে"—
যাকে সবাই ভাবত, “ও তো সব সামলে নিতে পারে…”
আমাদের ছোট্ট পরিবারে আমি জন্মেছিলাম প্রথম সন্তান হয়ে।
বাবার চোখে তখনও আমি আশার আলো ছিলাম।
কিন্তু ছোট ভাইয়ের জন্মের পর যেন সেই আলো নিভে গেল।
বাবার মনটায় অন্য এক আনন্দ বাসা বাঁধল।
ছোট ভাই দুষ্টুমি করলে বাবা হাসতেন,
আমি করলে বলতেন, “তোর বয়স কত? এভাবে আচরণ করিস?”
ছোট ভাই খেলনা চাইলে একঘণ্টার মধ্যে কিনে আনতেন,
আর আমি চশমার জন্য বললে বলতেন, “এইটুকু জিনিসের জন্য টাকা নাই এখন।”
স্কুলে ভালো রেজাল্ট করেও বাবার মুখে শুনতে পাইনি, “আফসোস, তুই আমার গর্ব।”
একবার খেয়াল করি—আমার জন্মদিনটা ভুলে গেছেন,
কিন্তু ছোট ভাইয়ের জন্মদিনে পুরো পাড়া জেনে গেছে।
মা যদিও মাঝে মাঝে আমাকে বুঝাতে চাইতেন,
তবুও বাবার সেই নির্লিপ্ত আচরণ গায়ে কাঁটার মতো বিঁধে থাকত।
আমার একটাই কাজ ছিল—ভুল না করা।
আমি ধীরে ধীরে বুঝে গিয়েছিলাম,
এখানে ভালোবাসা অর্জন করতে হয়, উপহার হিসেবে পাওয়া যায় না।
কলেজ পেরিয়ে, ভার্সিটিতে উঠলাম।
বাবার কাছ থেকে কখনো পড়ার খরচ চাওয়া হয়নি।
টিউশনি করতাম, কোচিং করাতাম—নিজেই নিজের পথ তৈরি করেছি।
ছোট ভাই তখন বাবার টাকায় প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছিল।
বাইক, মোবাইল, বিদেশি জুতা—সব তার জন্য।
তবুও আমি কিছু বলিনি।
চাকরি পেয়ে বাবা-মাকে জানাইনি।
চুপচাপ বাড়িতে টাকাপাঠাতে শুরু করলাম।
ছোট ভাই সেই সময় চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিল,
তবুও বাবার মুখে ছিল,
“ও একদিন অনেক বড় হবে। ওর বুদ্ধি আছে।”
আর আমি?
আমি শুধু দায়িত্ব পালন করে গেছি।
সময়ের বাঁক
একদিন হঠাৎ খবর আসে—বাবা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন।
আমি সব কাজ ফেলে ছুটে গেলাম।
ছোট ভাই তখন বিদেশে পড়তে ব্যস্ত।
মা তখন অসহায়, আতঙ্কে জড়োসড়ো।
আমি নিজে হসপিটাল ভর্তি করালাম,
ডাক্তার ডেকে আনলাম, বিল দিলাম,
রাত জেগে সেবা করলাম।
যখন বাবা একটু সুস্থ হলেন, বললেন—
“তুই এত কিছু করলি, আমি জানতাম না তুই এত বড় হয়েছিস…”
তার চোখে তখন জল।
বহু বছর পর, প্রথমবারের মতো বাবা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন—
“আমার ভুল হয়েছে রে... আমি সবসময় ভেবেছি ছোটটা দুর্বল, তাই ওকে আগলে রেখেছি।
কিন্তু তোকে বুঝতে পারিনি যে তুই চুপ থেকে সব দায়িত্ব নিচ্ছিস।”
আমি কিছু বললাম না।
শুধু বাবার হাতটা ধরলাম।
কিছুদিন পর…
ছোট ভাইও ফিরে এল।
সে-ও অবাক হয়ে বলে উঠল,
“দাদা, তুমি কত কিছু করেছ! আমিতো কখনো ভাবতেই পারিনি…”
বাবা একদিন রাতে ডিনারে বললেন—
“আমি দুই ছেলেকেই ভালোবাসি,
কিন্তু হয়তো সেটা প্রকাশে আমি ব্যর্থ ছিলাম।
একজনকে বেশি ভালোবেসে অন্যজনকে অবহেলা করলে সেটা ভালোবাসা না, সেটা অন্যায়।”
আমার চোখে জল এল না,
কিন্তু বুকটা ভারী হয়ে গেল।
সেই প্রথমবারের মতো বাবা আমাদের দুই ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখলেন,
আর বললেন—
“তোমরা দুজনেই আমার অহংকার।”
---
ছোট করে কিছু কথা:
এ গল্প কোনো একক পরিবারের নয়।
এটা হাজারো পরিবারে ঘটে যাওয়া এক নিঃশব্দ বাস্তবতা।
যেখানে দায়িত্ববান বড় সন্তান বারবার অবহেলার শিকার হয়,
তবুও সে-ই হয়ে ওঠে পরিবারের মূল ভিত্তি।
ভালোবাসা সমান হলে পরিবার হয় পূর্ণ।
তফাৎ হলে ভালোবাসা নয়—দেয়ালে ফাটল ধরে।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘গল্পের রাজ্য.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com
এমন মন ছুয়ে যাওয়া গল্প পরতে ভিজিট করুন ক্লিক