সান্ডা আসলে সম্পর্কে? ইসলাম কী বলে সান্ডা সম্পর্কে? সান্ডা খাওয়া যায় কি?
সান্ডা কী?
সান্ডা খাওয়া যায় কি না?
ইসলামে সান্ডা সম্পর্কে মতামত
সান্ডা ভাইরাল হওয়ার কারণ
---
সান্ডা কি খাওয়া যায়?
সান্ডার তেল সাধারণত বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য পরিচিত। এটি লোকজ চিকিৎসায় বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়, যেমন:
যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে
বাত ব্যথা ও পেশির ব্যথা উপশমে
আয়ুর্বেদিক ও হেকিমি চিকিৎসায়
তবে, অনেক সময় সান্ডা তেল বা এক্সট্রাক্ট ভুলভাবে মুখে খাওয়ার জন্যও বিক্রি করা হয়। অথচ কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে এটি খাওয়া নিরাপদ।
খাওয়ার দিক থেকে সতর্কতা:
এটি আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্য হিসেবে অনুমোদিত নয়।
বিষাক্ত প্রভাব থাকতে পারে।
ভুল মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
অতএব, সান্ডা খাওয়া মোটেও নিরাপদ নয়, বিশেষত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া।
---
ইসলামে সান্ডা সম্পর্কে মতামত
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে, সান্ডা একটি বিতর্কিত বিষয়।
হাদীস অনুযায়ী:
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে একবার সান্ডা পরিবেশন করা হয়েছিল, তিনি তা খাননি, তবে অন্য সাহাবিদের খেতে নিষেধও করেননি।
সহীহ মুসলিম ও সহীহ বুখারী-তে এমন হাদিস রয়েছে:
> “নবী (সা.) সান্ডা খাওয়া পছন্দ করেননি, কিন্তু তিনি বলেননি যে এটা হারাম। বরং সাহাবিগণ তা খেয়েছেন।”
ফিকহ মতে:
হানাফি ও মালিকি মাযহাব: সান্ডা খাওয়া মাকরূহ (অপছন্দনীয়)।
শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাব: এটি খাওয়ার অনুমতি রয়েছে, তবে সতর্কতা জরুরি।
সারাংশ:
ইসলামে সান্ডা হারাম নয়, তবে অনেক আলেম তা খাওয়া নিরুৎসাহিত করেন কারণ এটি অপ্রীতিকর ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
---
সান্ডা কি?
সান্ডা বা সান্ডা তেল মূলত একটি সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী “Indian Spiny-tailed Lizard” (বৈজ্ঞানিক নাম: Saara hardwickii) থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাকৃতিক তেল। এই প্রাণীটিকে বাংলায় অনেকে সান্ডা গুইসাপ বা সানডা টিকি নামেও ডেকে থাকেন। এটি দেখতে ছোট আকৃতির গুইসাপের মতো, লেজ মোটা ও কাঁটাযুক্ত হয় এবং প্রধানত ভারতে, পাকিস্তানে ও কিছু আরব অঞ্চলে পাওয়া যায়।
সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে এই প্রাণীটি বাস করে এবং এটি তেল সংগ্রহের জন্য অনেক সময় অবৈধভাবে শিকার করা হয়।
---
সান্ডা ভাইরাল হওয়ার কারণ কী?
সাম্প্রতিক সময়ে “সান্ডা ভাই”, “সান্ডা তেল” কিংবা “সান্ডা পাইলাম” – এ ধরনের শব্দ সামাজিক মাধ্যমে খুব ভাইরাল হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ:
১. যৌন শক্তি বৃদ্ধির গুজব:
লোকমুখে প্রচলিত যে সান্ডা তেল বা নির্যাস খেলে পুরুষত্ব বা যৌনশক্তি অনেকগুণ বেড়ে যায়। অনেক ইউটিউবার ও তথাকথিত “হেকিম” বা ফেইসবুক পেজ এই বিষয়টিকে নিয়ে ভাইরাল কন্টেন্ট তৈরি করেছে।
২. টিকটক ও ফেসবুক রিলস:
একজন ব্যক্তি “সান্ডা পাইলাম” বলে একটি কৌতুক ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল হন। তারপর অনেকেই এই শব্দ ব্যবহার করে ট্রেন্ড তৈরি করে।
৩. লাজুক ও যৌনতাসূচক কথার হাস্যকর ব্যঙ্গ:
মানুষের একান্ত বিষয় নিয়ে যখন কেউ মজা করে বলে, তখন সেটি সাধারণত সহজেই ভাইরাল হয়। “সান্ডা” কথাটিকে ব্যবহার করে লজ্জাশূন্য অথচ হাস্যকর কনটেন্ট বানানো হয়েছে, যেগুলো সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো ট্রেন্ডে পরিণত হয়।
---
ছোট করে আলোচনা:
সান্ডা একটি বাস্তব প্রাণী, যার নির্যাস বহু যুগ ধরে লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এটি খাওয়া স্বাস্থ্যগতভাবে নিরাপদ নয়, এবং ইসলামও সরাসরি হারাম বলেনি, কিন্তু সাবধানতার পরামর্শ দিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে সান্ডা বিষয়ক কনটেন্টগুলো মূলত অবৈজ্ঞানিক ও কৌতুকনির্ভর। এগুলোর পেছনে থাকা গুজব বা তথ্য যাচাই না করে বিশ্বাস করা উচিত নয়।
জ্ঞানভিত্তিক ও সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন— কারণ সঠিক জ্ঞানই মানুষকে রক্ষা করে অন্ধবিশ্বাস থেকে।