গল্প: ফিরে এলো অন্য নামে
পনেরো বছর পর দেশে ফিরে আসা যেন এক স্বপ্নের মত লাগছিল। প্লেন যখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলো, আমার বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা চাপা অস্থিরতা। দেশের গন্ধ, মানুষ, রাস্তার শব্দ—সবকিছু একসাথে হৃদয়ে ঝড় তুললো।
বাড়িতে পৌঁছেই বুঝলাম, মা-বাবা আমার দেশে ফেরার অপেক্ষায় শুধু নয়, বিয়ের বন্দোবস্তও প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে। মা বলল,
— এখন তো তোর বয়স হয়ে যাচ্ছে, মানুষ তো এই বয়সে নাতি কোলে নেয়!
বাবা চোখ তুলে বললেন,
— আর দেরি নয়, এবার বিয়ে করেই ফেল!
আমি বললাম,
— আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে একটা শর্ত, মেয়ে দেখতে আমি যাবো না। তোমরা যাকে ঠিক করো, আমার কোনও আপত্তি নেই।
মা যেন বেহেশতের টিকিট পেয়ে গেলো।
— তোর জন্য এমন একটা মেয়ে পছন্দ করছি, দেখলেই ভালোবাসে ফেলবি। ওর মা বলেছে, মেয়েটা তোকে পছন্দও করে ফেলেছে!
মনটা খটকা দিলো। আমি তো কাউকে চিনি না দেশে, কে পছন্দ করলো? কিন্তু যেহেতু নিজের জীবনের সবকিছুই বিদেশে গুছিয়ে এনেছি, ভাবলাম এবার মা-বাবার ইচ্ছা পূরণ হোক।
বিয়ের দিন
আলো, হাসি, মেহেদির গন্ধ, আর মঞ্চে ঠোঁট কাঁপিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমি। মেয়েকে দেখিনি এখনো। সবকিছু যেন সিনেমার মত। সবাই বলছে, ভাগ্য করে এমন বউ পেতে হয়। আমি শুধু মাথা নেড়ে যাচ্ছি।
বাসর রাতে দরজা খুলে ঢুকতেই দেখি, বউ ঘুমিয়ে পড়েছে। ধীরে কাছে গিয়ে মুখটা দেখতে গিয়েই এক নিমিষে পৃথিবীটা থেমে গেল।
— লিজা!!
মুখটা হুবহু! সেই লিজা! কলেজের প্রেমিকা। যে একদিন হঠাৎ করেই হারিয়ে গিয়েছিল জীবনের ছায়া থেকে।
আমি অবাক, স্তব্ধ, হতভম্ব! আমার মুখ থেকে সেই পুরোনো নামটা বেরিয়ে আসতেই বউ চোখ মেলে তাকালো।
— আপনি আমার মাকে কীভাবে চেনেন?
আমি গলা শুকিয়ে গেলেও কোনোমতে বললাম,
— লিজা… মানে… তোমার মা কি লিজা?
— হ্যাঁ, উনি তো আমার মা। আপনি উনাকে লিজা নামে ডাকলেন কেন?
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি বুঝতে পারলাম, আমি প্রেমিকার মেয়েকে বিয়ে করেছি।
১৬ বছর আগে...
কলেজ জীবনের সবচেয়ে রঙিন অধ্যায়—লিজা। ওর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো যেন একটা সিনেমা, আর আমরা ছিলাম সেই প্রেমের কেন্দ্রীয় চরিত্র। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন শুনি, লিজার বিয়ে। ও কিছুই বলেনি। বুকটা ছিঁড়ে গিয়েছিল।
বাবা-মার চাপে দেশের বাইরে চলে যাই। আর সেখানেই কাটে লম্বা সময়। সময়ের স্রোতে সম্পর্কগুলো ভেসে যায়, কিন্তু কিছু মুখ মনে থেকে যায়… ঠিক যেমন লিজা।
আর আজ, সেই লিজার মেয়ে আমার স্ত্রী!
পরদিন সকালে ডাইনিং টেবিলে যখন আমার শাশুড়ি—মানে, লিজা—এসে চা হাতে দাঁড়ালো, আমি চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম। সে চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে।
— চিনতে পেরেছো?
— ভুলার মতো ছিলে না কখনো…
লিজা হাসলো। চুপচাপ এক মুহূর্ত পরে বলল,
— সময় বড় অদ্ভুত, না? তুমি যাকে চেয়েছিলে, সে তো এখন তোমার মা-সম, আর তুমি এখন আমার মেয়ের জীবনসঙ্গী।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
— ভালোবাসা বুঝি রূপ পাল্টায়, হারায় না…
— হ্যাঁ, রূপ পাল্টায়… সেই প্রেম আজ আমার মেয়ের চোখে ফিরেছে, তোমার চোখে লুকিয়ে থাকা অতীত এখন ওর ভবিষ্যৎ।
আমাদের মাঝখানে দীর্ঘ নীরবতা। কিন্তু সে নীরবতায় ছিল না কোনো অস্বস্তি, ছিল এক অন্যরকম শান্তি।
শেষে...
জীবন মাঝে মাঝে এমন টুইস্ট দেয়, যেটা কোনো সিনেমা, কোনো গল্পের বইও সাজাতে পারে না।
আমি লিজাকে চেয়েছিলাম, ভাগ্য দিলো তারই ছায়াকে।
আর লিজা?
সে আমাকে পায়নি, কিন্তু আমাকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনলো—এক নতুন পরিচয়ে, এক নতুন নামে।
তাই তো বলি,
ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, ফিরে আসে—অন্য নামে।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘গল্পের রাজ্য.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com
এমন মন ছুয়ে যাওয়া গল্প পরতে ভিজিট করুন ক্লিক