শুধু ধনীর সাথে বিয়ে হলেই জীবনে সুখ হয়?
মেঘলা বিকেল। জানালার কাঁচে জল জমেছে হালকা বৃষ্টিতে। ঘরের কোণে বসে নীলিমা এক কাপ চা হাতে ভাবছে—এই কি জীবন?
ছয় বছর আগে এমন এক বিকেলেই বিয়ে হয়েছিল তার। পাত্র ছিল ভালো, প্রতিষ্ঠিত, শহরের এক নামি ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। বাবা-মা বলেছিলেন, “এই সুযোগ আর পাবি না। বয়স হয়ে যাচ্ছে, প্রেম দিয়ে পেট চলে না।”
নীলিমা তখন একটা বেসরকারি অফিসে চাকরি করত। নিজের মতো করে ছোট ছোট স্বপ্ন গড়ে তুলেছিল। তার এক সহকর্মী ছিল, নাম ইমরান। খুব সাধারণ, কিন্তু তার মধ্যে যে শ্রদ্ধা আর নিঃশব্দ ভালোবাসা ছিল, তা নীলিমা বুঝেছিল একটু দেরিতে। ইমরান তাকে ভালোবাসত, কিন্তু কখনো বলেনি। একবার সাহস করে চিঠি দিয়েছিল, নীলিমা তা ফেরত দিয়ে বলেছিল—“আমার জীবন বাবা-মা ঠিক করবে।”
---
বিয়ের পরে শুরু
শুরুতে সব ঠিকই ছিল। গাড়ি, দামী ফ্ল্যাট, বড় বড় গিফট—সব ছিল। কিন্তু ছিল না আলোচনার মতো একটা সম্পর্ক। স্বামী রাকিব সবসময় ব্যস্ত থাকত ব্যবসায়, বন্ধুদের সাথে, পার্টিতে। তার কাছে নীলিমা যেন ঘরের আসবাব—নজরে থাকার মতো, ব্যবহারে নয়।
নীলিমার দিন কাটত নিঃশব্দে। রান্না, পরিষ্কার, আত্মীয়দের খোঁজখবর—এসবের ভেতর দিয়ে। মাসে একবার হয়তো বাইরে যাওয়া, তখনও রাকিবের চোখ মোবাইলে।
চোখের কোণে জমা হত অজানা ক্লান্তি। অথচ নীলিমা কখনো মুখ খোলেনি। মা ফোন করলে বলত, “ভালো আছি।” কারণ তার বাবার চোখে সে ছিল ‘ভাগ্যবান মেয়ে’, যার সব আছে।
---
এক সন্ধ্যায় পুরনো বন্ধু দেখা
একদিন হঠাৎ পুরনো অফিসের এক বন্ধু দেখা করল। কথায় কথায় ইমরানের কথা উঠল। বন্ধু জানাল, ইমরান এখন ঢাকার বাইরে একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে। বিয়ে করেনি। একটা লাইন বলল—“তোকে না পেয়ে নাকি আর কারো পাশে শান্তি খুঁজে পায়নি।”
সেই রাতে নীলিমা ঘুমাতে পারেনি। শুধু ভাবছিল—শান্তি বলতে আমরা কী বুঝি? ধন, গয়না, গাড়ি?
নাকি—ভালোবাসা, সম্মান, মানসিক নিরাপত্তা?
---
রাতের অন্ধকারে স্বীকারোক্তি
রাকিব একদিন রাতে অফিসের টেনশনে হঠাৎ রেগে গেল। চিৎকার করে বলল, “তুই শুধু একটা দায়—ঘর সামলাস, মুখ বন্ধ রাখ।”
নীলিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। কোনো উত্তর ছিল না তার কাছে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে সে আয়নায় নিজেকে দেখে বলল, “আমার জীবন কি এভাবেই যাবে?”
---
আজকের দিন
নীলিমা এখন দুই সন্তানের মা। সংসার চলছে, মানুষ বলবে "ভালো আছে"। কিন্তু সে জানে, তার ভেতরে একটা শূন্যতা রয়েছে। ভালোবাসার না পাওয়া, শ্রদ্ধার অভাব, জীবনের ব্যর্থ একটা কোণ।
টাকা দিয়েই সব পাওয়া যায় না। একাকীত্ব মুছে যায় না। ধন-সম্পদের মরিচা পড়ে যায়, কিন্তু অভিমান জমে পাথর হয়ে যায় বুকে।
---
শেষ কথাটা তার নিজের মুখে
"আমি কাউকে দোষ দেই না। বাবা-মা আমাকে যা ভালো মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। কিন্তু জীবন বেছে নেওয়ার অধিকার যদি আমার হাতে থাকত, আমি হয়তো কম টাকার ঘরে থাকতাম, কিন্তু মন দিয়ে ভালোবাসা পেতাম।"
নীলিমার জীবনের এই চুপচাপ বয়ে চলা নদী যেন প্রতিদিনই প্রশ্ন করে—“মনে সুখ না থাকলে, বাহ্যিক সুখ দিয়ে কতো দিন চলা যায়?”
জবাব এখনও নেই। হয়তো কোনোদিন আসবেও না।
Disclaimer / Story Policy
This story is entirely fictional. Any resemblance to actual events, characters, places, or times is purely coincidental. The primary purpose of our stories is to entertain readers and present various social or emotional perspectives.
We do not intend to provoke anyone, incite violence, or cause defamation in any way. Every individual and culture is different, and we deeply respect that. Our stories are not meant to hurt anyone’s feelings or beliefs.
If any part of the story resembles your personal life, it is completely unintentional and coincidental. We do not hold responsibility for such similarities.
"এই গল্পটি ‘গল্পের রাজ্য.কম’ ওয়েবসাইটের নিজস্ব প্রকাশনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া এই গল্প বা এর কোনো অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ, অনুলিপি বা ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইলে, অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুন।" Jibonjuddhogolpo@gmail.com
এমন মন ছুয়ে যাওয়া গল্প পরতে ভিজিট করুন ক্লিক