জাকাত কাদের উপর ফরজ? – সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা
জাকাতের মাসালা
জাকাত হলো ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত, যা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণকারী মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক। এটি দরিদ্রদের সহায়তার জন্য এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আল্লাহ নির্ধারিত একটি ব্যবস্থা।
---
✅ যাদের উপর জাকাত ফরজ:
জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। নিচে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. মুসলিম হতে হবে
জাকাত শুধু মুসলমানদের জন্য ফরজ।
অমুসলিমদের উপর জাকাত বাধ্যতামূলক নয়।
২. প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে (বালেগ হওয়া জরুরি)
ছোট বাচ্চাদের উপর জাকাত ফরজ নয়।
তবে তাদের সম্পদ থাকলে অভিভাবক তাদের পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করতে পারেন।
৩. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে
মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির উপর জাকাত ফরজ।
যদি কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়, তাহলে তার সম্পদ থাকলেও জাকাত ফরজ নয়।
৪. সম্পদের মালিক হতে হবে (নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে)
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত ফরজ হয়।
সোনার হিসাবে: ৭.৫ ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম)
রূপার হিসাবে: ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)
নগদ টাকা বা ব্যবসার মাল: যদি উপরের মূল্যের সমান হয়, তাহলে জাকাত দিতে হবে।
৫. প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকতে হবে
যদি মৌলিক চাহিদা (খাবার, বাড়ি, জামাকাপড়, চিকিৎসা) মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকে, তবেই জাকাত ফরজ হয়।
৬. সম্পদ এক বছর হতে হবে
নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর ধরে থাকলে জাকাত দিতে হবে।
৭. ঋণমুক্ত হতে হবে
যদি কারো অনেক ঋণ থাকে এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তাহলে তার জন্য জাকাত ফরজ নয়।
তবে ঋণ পরিশোধের পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে জাকাত দিতে হবে।
---
✅ জাকাতের হার কত?
মোট সম্পদের ২.৫% জাকাত দিতে হবে।
অর্থাৎ ৪০ টাকায় ১ টাকা জাকাত ফরজ।
---
✅ যাদের জাকাত দেওয়া যাবে:
কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী, ৮ ধরনের ব্যক্তিকে জাকাত দেওয়া যায়:
১. গরিব: যাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট সম্পদ নেই।
2. অতিদরিদ্র: যারা একেবারেই অসহায়, সম্পদহীন।
3. যারা জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ করে।
4. দাস মুক্তির জন্য।
5. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: যারা বৈধ কারণে ঋণে পড়েছে।
6. আল্লাহর পথে: ইসলাম প্রচার ও ধর্মীয় কাজে।
7. ভ্রমণকারী (মুসাফির): যারা পথে বিপদে পড়েছে।
8. নওমুসলিম: যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে কিন্তু আর্থিক সমস্যায় আছে।
---
✅ যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না:
ধনী ব্যক্তি (যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে)।
নিজের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানি-নানি।
নিজের সন্তান, নাতি-নাতনি।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না।
নবী (সা.) এর বংশধরদের (সাইয়্যেদ পরিবার) জাকাত দেওয়া যায় না।
---
যদি কেউ মুসলিম, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হয় এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার জন্য জাকাত ফরজ। এটি দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং সমাজে দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করে।