বউ শাশুড়ির ভালোবাসা | বউ শাশুড়ির, সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

 বউ শাশুড়ি

বউ শাশুড়ি

আমাকে প্রায় জোর করে এনে ড্রয়িংরুমে বসালো আমার নতুন ছেলের বৌ, এসেই দেখি আমার স্বামী জামান সাহেব আগে থেকেই বসে আছেন। 


আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে ছেলে আর সদ্য বিবাহিত ছেলের বৌ দুজনেই ভীষণ উচ্ছ্বাস নিয়ে কেক এনে বেশ একাকার এক অবস্থা!  


- মা কাটেন না কেক টা। ও মা। কি ভাবছেন?  


- আমার এসব আদিখ্যেতা একদম ভালো লাগেনা৷ কখনো এরকম কিছু করার কোনও প্রয়োজন নেই বৌমা। 


বেশ জোড়ালো গলায় বলেই হনহন করে রান্নাঘরে চলে আসলাম।


রান্নাঘরে সবার আড়ালে আসতেই, চোখের পানি দলা পাকিয়ে বের হয়ে আসলো। বৌমার ওপর এরকম রাগ দেখানো ঠিক হয়নি। মেয়েটার তো কোনও দোষ ছিলো না! 


আসলেই কি এসব বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন আমার কাছে কখনো আদিখ্যেতা ছিলো???


উনত্রিশ বছর আগে যখন এ বাড়িতে নতুন বউ হয়ে আসি তখন আমার বয়েস কেবল ১৬ কি ১৭, কি ধুমধামে বিয়ে হয়েছিলো আমার। ঘর ভর্তি আত্মীয় স্বজন, সে যেনো এক জাঁকজমক অবস্থা৷ ধীরে ধীরে বেশ কিছু দিন পর, আত্মীয় স্বজনরা বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে চলে গেলেন। কেমন এক ফাঁকা বাড়ি। ওতো বিশাল বাড়িতে কেবল ছ'জন মানুষ। আমার স্বামী জামাল সাহেব, আমি, আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি, আর দুই ননদ। 


ঘরের সব কাজকর্ম শেষ করে, সবকিছু গুছিয়ে শুধু রাতটুকু বরাদ্দ থাকতো আমার স্বামীর সাথে সময় কাটানোর জন্য। সারাদিনে সারাক্ষণ ছটফট করতাম কখন একটু উনার সাথে গল্প করতে পারবো, কখন উনার সাথে একটু সময় কাটাবো। 


রাতের বেলার ঐ সময়টায় গল্প আর হতো না। গল্প শুরু করলেই, তিনি খুব বিরক্তি নিয়ে বলতেন এখন আর তোমার এসব ছাইপাশ গল্প ভালো লাগছে না মিনু, লাইট নিভিয়ে কাছে আসো। 


প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো।


এ বাড়িতে আদেশ দেয়া ছাড়া আমার সাথে কেউ কথা বলতো না। আমার দুটো ননদ ই ছিলো আমার সমবয়সী। তাদের সাথে কখনো গল্প করতে গেলেই তারা ভীষন বিরক্তবোধ করতো। না হয় আমাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করতো। 


একদিন তো বড় ননদ বলেই বসলো, ভাবী তুমি এভাবে হুটহাট আমাদের রুমে এসো না তো।  আমাদের প্রয়োজন হলে তোমায় ডেকে নিবো। 


আমার স্বামী জামাল সাহেব কে, এক রাতে খুব আবদার করে বলেছিলাম, "আমার জন্য কলাপাতা রংয়ের শাড়ি এনে দিবেন? খুব শখ পড়ার।"


তিনি সেদিন আমায় বলেছিলেন, "কিছু লাগলে মা কে বলবে, মা র কাছে আমার টাকা থাকে, আমার কিনে দেয়ার সময় নেই।"


এটাই বোধ হয় তার কাছে আমার প্রথম আর শেষ চাওয়া ছিলো! 


দেখতে দেখতে বিয়ের যেদিন এক বছর হয়ে গেলো, সেদিন সকাল থেকেই আমার উৎসব উৎসব লাগছিলো। 


সে সকালে আমি গোসল করে, সুন্দর একটা শাড়ি পড়ি।  সেদিন আমার স্বামীর জন্য খুব কিছু করতে মন আনচান করছিলো।  


আমাদের বাড়ির রান্না হতো শাশুড়ী মায়ের নির্দেশে, উনি যা বলতেন তাই করতে হতো। আমার বিবাহ বার্ষিকীর কথা হয়তো সবাই ভুলে গেছে, তাই বিশেষ কিছু করা হলো না। দুপুরে যখন সবাই খেয়ে ভাতঘুম দিচ্ছে, তখন আর আমার মন মানলো না। 


টুকটুক করে রান্নাঘরে কেক বানাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম বিকেলে সে বাড়ি ফিরলেই, সবাই মিলে কাটবো৷ কি দারুন উচ্ছ্বাস ছিলো আমার৷


বিকেলে আমার স্বামী বাড়ি ফিরে এসেছেন। সবাইকে বসার ঘরে চা দিয়ে,  ভাবছিলাম কীভাবে কেক টা সামনে আনি, ভীষন লজ্জা লাগছিলো। নিয়ে এসে উনার সামনে রেখে, সবাই কে বললাম আজ তো আমাদের বিয়েবার্ষিকী, তাই এই কেকটা  বানিয়েছি। 


আমার স্বামী সহ বাড়ির সবাই বেশ বিষ্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকালেন। 

আমার স্বামী বেশ চিৎকার করে বলে উঠলেন, লাজ শরমের মাথা খেয়েছো নাকি? এধরনের আদিখ্যেতা এ বাড়িতে হবে না। 


বড় ননদ টিপ্পনী কেটে আমায় বললো, ভাবী দেখি তোমার বিবাহবার্ষিকীর কেক কেমন খেতে হলো! ঢংয়ের আর শেষ নেই বাবা! 


বলে ছোঁ দিয়ে হাত থেকে কেক টা নিয়ে দুই ননদ তাদের রুমে চলে গেলো। 


শাশুড়ী মা আমায় সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি বেঁচে থাকতে যেনো এ বাড়িতে এসব ন্যাকামো আর না করা হয়। 


সে রাতে, আমি দু'চোখের পাতা একবারের জন্যেও বন্ধ করতে পারিনি, ডুকরে ডুকরে কান্না আসছিলো। 


আর আমার স্বামী রাগে গজগজ করে ঘুমিয়ে গেলেন! 


বড় দাগ কেটে গেলো, আমার প্রথম বিবাহবার্ষিকী! তারপর থেকে আজ অব্দি কোনওদিন আমি আর জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী ওসব মুখেও তুলিনি। 


কিন্তু দিব্যি দুই ননদের বিয়ের পর ওদের জাঁকজমকপূর্ণ বিবাহবার্ষিকীর দাওয়াত খেতে গেছি প্রতিবছর, স্বামী শাশুড়ী সহ। কোন এ্যানিভার্সারিতে কি গিফট দেয়া হবে এ নিয়েও বেশ তোড়জোড় চলতো এ বাড়িতে। 


সবার হয়তো সবকিছু পালন করার অধিকার ছিলো, কিন্তু এ বাড়ির বউয়ের জন্য সব ছিলো নিষিদ্ধ!  

----------------------


বৌমার ডাকে ঘোর কাটলো, 

- একি মা, আপনি কাঁদছেন কেনো?? আমি কি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি মা? 

বলেই মেয়েটা আমায় জড়িয়ে ধরলো।


- না রে মা কিছু হয়নি, স্যরি রে মা, কিছু মনে করো না এভাবে তোমাকে কড়া কথা বললাম। চলো কেক টা কাটি, আজ থেকে এ বাড়িতে সব আনন্দ উৎসব পালন করবো। 


আমার অনুভূতির না হয় ও বাড়িতে কোনও মূল্য ছিলো না। কিন্তু এ বাড়ির আমার এই নতুন মেয়েটার তো অনুভূতির মূল্য আমার কাছে অনেক। 


-ছোটগল্প 

ছুঁড়ে ফেলা শখ!

Tropa Chakrobarty

মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।