বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প | বাস্তব জীবনের গল্প ২০২৫ সেরা

 বাস্তব জীবনের কিছু গল্প

বাস্তব জীবনের কিছু গল্প

রাতে খাবার টেবিলে বসে খেয়াল করলাম

বৃষ্টি খেতে আসে নি। পাশে বসে থাকা মা

কে বললাম,

-- মা, বৃষ্টি খেতে আসলো না?

মা মুখটা গোমড়া করে বললো,

- তোমার নবাবজাদি বউ কেন খেতে আসলো

না আমি কি জানি..

তোর মামাতো বোন তোর ২ বছর পর বিয়ে করে

সন্তানের মা হয়ে গেছে অথচ তুই ভালোবেসে

কোন মেয়েকে বিয়ে করলি যে ৪ বছরেও তকে

একটা সন্তান দিতে পারলো না...

মার কথা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।

খাবার রেখেই উঠে পড়লাম। আমার উঠে পড়া

দেখে মা রাগে বলতে লাগলো,

- তর বউয়ের নামে তো তোকে কিছু বলাই যায়

না। কিছু বললেই রেগে যাস। ভালোবেসে

বিয়ে করে বউয়ের গোলাম হয়ে গেছিস। মার

কষ্ট তো বুঝিস না। আমরও তো ইচ্ছে করে নাতি

নাতনি মুখ দেখতে...

রুমে এসে দেখি বৃষ্টি শুয়ে আছে। সত্যি বলতে

আজকাল আমিও বৃষ্টির প্রতি হাঁপিয়ে উঠেছি৷

আমার অফিসের সকল কগিলরা আমার পরে

বিয়ে করে বাবা হয়ে যাচ্ছে অথচ আমি বাবা

হতে পারছি না।মাঝে মাঝে কগিলরা আমায়

নিয়ে হাসি তামাশা করে। ভার্সিটিতে পড়ার

সময় ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটা ছিলো

বৃষ্টি । অনেক কষ্টে ওর সাথে প্রেম

করেছিলাম তারপর আমার পরিবারের অমতে

ওকে বিয়ে করেছিলাম। মা চেয়েছিলো আমি

আমার মামাতো বোনকে বিয়ে করি। তাই মা

বৃষ্টিকে খুব একটা পছন্দ করে না...

বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎ বৃষ্টি আমায়

জড়িয়ে ধরে বললো,

~ অন্তিম একটা কথা বললে রাগ করবে?

আমি বুঝতে পারছিলাম বৃষ্টি কি বলবে।

তারপরও বললাম,

-- কি কথা?

~চল না আমরা একটা বার ডাক্তারের কাছে

যাই। গিয়ে দেখি ডাক্তার কি বলে।

আমি বৃষ্টিকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে

বললাম,

-- তোমায় আমি আগেও বলেছি আর এখনো

বলছি আমি ডাক্তারের কাছে যাবো না।

ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজেদের প্রাইভেট

কথাবার্তা বলতে পারবো না। তুমি জানো এই

সব ডাক্তারের কাছে গেলে কি কি নোংরা

নোংরা প্রশ্ন করে?

আমার কথা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়ে বললো,

~ অন্তিম , তুমি এই যুগে এই সব কি কথা বলছো।

তোমার চিন্তা ভাবনা এত পুরোনো কেন?

বৃষ্টির কথা শুনে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে

গেলো। আমি চিৎকার করে বললাম,

-- তুমি কেমন মেয়ে যে এত বছরেও আমায়

একটা সন্তান দিতে পারো নি। তোমায় বিয়ে

না করে যদি মার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে

করতাম তাহলে এতদিনে আমি ঠিকি বাবা হয়ে

যেতাম।

আমি জানি বৃষ্টি এখন সারারাত কান্না

করবে। তাই আমিই রুম থেকে বের হয়ে

গেলাম...

পরদিন অফিসে বসে কাজ করছি। এমন সময়

বৃষ্টি ফোন দিয়ে বললো,

~ অন্তিম আমি পপুলার ক্লিনিকে বসে আছি।

তুমি প্লিজ একটা বার আসো।

আমি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম। আর

মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম, আর না

অনেক সহ্য করেছি...

ডিভোর্স লেটারটা দেখে বৃষ্টি আমার পায়ে

ধরে বললো,

~অন্তিম প্লিজ, আমি এটা সহ্য করতে পারবো

না। তোমায় ছেড়ে থাকার কথা আমি চিন্তাও

করতে পারি না। তুমি অন্য একটা মেয়েকে

বিয়ে করো আমার আপত্তি নেই। আমি দরকার

পড়লে কাজের মেয়ের মত এই বাসায় পড়ে

থাকবো। তারপরও প্লিজ আমায় ডিভোর্স দিও

না...

আমি বৃষ্টির কথা শুনিনি। ওকে ঠিকি ডিভোর্স

দিয়ে দেই।

এর মাঝে ৬ টা বছর পার হয়ে গেলো। আমি

প্রায়সময় বিকালে শিশুপার্কে এসে বসে

থাকি। ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলাধুলা

দেখতে খুব ভালো লাগে। হঠাৎ খেয়াল করলাম

জাফরান রঙের শাড়ি পড়া কেউ একজন আমার

দিকে আসছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি

বৃষ্টি । এত বছর পর বৃষ্টির সাথে আমার দেখা।

বৃষ্টি আমার পাশে বসতে বসতে বললো,

~দাড়িগোঁফে তোমায় যে বাদরের মত লাগে

আগে জানতাম না তো।

আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,

-- মানুষের বয়স দিন দিন বাড়ে অথচ তোমার

দেখছি বয়স কমছে। এত সুন্দর হলে কিভাবে?

ফেরেন লাভলী ক্রিম ৩ বেলা মুখে লাগাও

আর ১ বেলা খাও না কি?

আমার কথা শুনে বৃষ্টি হাসতে হাসতে বললো,

~ তোমার দুষ্টামি করে কথা বলার স্বভাবটা

এখনো যায় নি। তুমি জানো ভার্সিটিতে

তোমার এই দুষ্টমিষ্টি কথার জন্য তোমার

প্রেমে পড়েছিলাম। যদিও বিয়ের ১ বছর পর

থেকে কখনো আমার সাথে ভালো করে

হাসিমুখে কথা বলো নি। যায় হোক এইখানে

বসে আছো কেন?

আমি কিছুটা সময় নিরব থেকে বললাম,

-- তোমায় ডিভোর্স দেওয়ার পর মার পছন্দের

একটা মেয়েকে বিয়ে করলাম। বিয়ের ২

বছরের পর যখন সন্তান হচ্ছিলো না তখন আমার

স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম।

ডাক্তার পরিক্ষা করে বললো সমস্যাটা

আমার। তবে নিয়মিত ঔষধ খেলে সমস্যার

সমাধান হবে। তবে এতে অনেক সময়ের

প্রয়োজন। কিন্তু আমার স্ত্রী এটা মানতে

পারে নি। তার সন্তান দরকার কারণ তার পরে

যে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তারা মা হয়ে

গেছে। তাই সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে

গেছে...

এমন সময় দেখলাম খুব মিষ্টি একটা বাচ্চা

মেয়ে দৌড়ে বৃষ্টির কোলে আসলো। আর

বাচ্চাটার পেছন পেছন একটা লোক হাঁপাতে

হাঁপাতে আসলো। বাচ্চা মেয়েটা তখন

বৃষ্টিকে বললো,

-আম্মু আমি ফাস্ট হয়েছি। আব্বু আমার সাথে

পারে নি।

লোকটি তখন আমাকে দেখে অবাক হয়ে

বললো,

- আরে অন্তিম সাহেব কেমন আছেন আপনি?

আপনার কথা বৃষ্টির মুখে অনেক শুনেছি।

আপনায় অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্যই আমি

বৃষ্টির মত একজনকে স্ত্রী হিসাবে পেয়েছি।

আপনি বৃষ্টিকে ডিভোর্স না দিলে আমি

কখনোই ওকে স্ত্রী হিসাবে পেতাম না। তাই

ভাই আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

বৃষ্টি চলে যাচ্ছে। ওর নিজের শাড়ির আঁচল

দিয়ে লোকটার মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলছে,

এই বয়সে আমার মেয়ের সাথে দৌড়া দৌড়ি

করে হাত পা ভাঙার শখ হচ্ছে তাই না.

আজ এই লোকটার জায়গাতে আমার থাকার

কথা ছিলো। কিন্তু আমার একটা ভুলের কারণে

আমার পুরো জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো...

জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। আজ যাকে

আমরা অবহেলা করে অন্যজনকে নিয়ে সুখী

হওয়ার কথা ভাবছি কয়েকদিন পর দেখা যাবে

সেই অবহেলিত মানুষটি তোমার চেয়ে হাজার

গুণ বেশি সুখে আছে। আর তার সেই সুখে

থাকাটাই হবে তোমার কষ্টের সবচেয়ে বড়

কারণ..

সব ধরনের বাস্তব জীবনের গল্প পড়ুন।